ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘শুক্রাণু দানকারীই আইনগতভাবে বৈধ পিতা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:২৪ পিএম, ১৯ জুন ২০১৯ বুধবার

অস্ট্রেলিয়ায় ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর বাবা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে শুক্রাণু দানকারী এক ব্যক্তিকে। এক রায়ে অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালত বলেছে, ঐ শিশুর জীবনে সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে ওই ব্যক্তির। শিশুটির জন্মদানকারী মা ও তার স্ত্রীকে শিশুটিসহ নিউজিল্যান্ডে যাওয়া ঠেকাতে আদালতে লড়াই শুরু করেন ঐ ব্যক্তি।

নতুন এই রায়টি দেশটির নিম্ন আদালতের দেয়া এক আদেশ বাতিল করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় বাবা-মা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার আইনী আওতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এ রায়। ঐ ব্যক্তির আইনজীবী তাহলিয়া ব্লেইয়ার বলেন, টানা পাঁচ বছর লড়াইয়ের পর এই স্বীকৃতি মিললো তার মক্কেলের। তিনি আন্তর্জাতিক এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোন ধরণের রোমান্টিক সম্পর্কে না জড়িয়ে বন্ধুর সাথে যে বাবারা সন্তান লালন পালন করতে চান তাদের সবার জন্যই এ রায় গুরুত্বপূর্ণ।’

বিতর্কটি কী ছিল?

২০০৬ সালে শুক্রাণু দানের সময় ৪৯ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তি এবং শিশুটিকে জন্মদানকারী মা পরস্পর বন্ধু ছিলেন। তারা যৌথভাবে শিশুটিকে বড় করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কিছুদিন পর বিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। ঐ নারীর আইনজীবী দাবি করেন, ঐ ব্যক্তি শিশুটির বাবা নন। শিশুটির জন্ম সনদে ঐ ব্যক্তিকেই বাবা হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং শিশুটিও তাকেই ‘বাবা’ ডাকতো।

বুধবার অস্ট্রেলিয়ার হাইকোর্ট এক আদেশে বলেছে, বাবা হিসেবে বৈধ স্বীকৃতি রয়েছে ঐ ব্যক্তির। এখন ঐ পরিবারটিকে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমাতে পারবে না।

রায়ে বলা হয়, ‘গর্ভধারণের একটি কৃত্রিম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শুক্রাণু দান ছাড়া আর কোন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না এমন ব্যক্তিকে ঐ শিশুর জৈবিক পিতা বা `শুক্রাণু দানকারী` বলে উল্লেখ করা হয়, এবং এ থেকে এটাতে উপনীত হওয়া যায় যে, এই প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়া কোন শিশুর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে এসবের সাথে এ মামলার কোন সম্পর্ক নেই।’ তবে আইনী কারণে আদালতে কোন পক্ষের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই আদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির পারিবারিক আইন বিষয়ক অধ্যাপক ফিওনা কেলি বলেন, এটা আইনী বৈধতা পেলো যে, কোন একাকী নারীকে শুক্রাণু দানের পর ঐ ব্যক্তি যদি শিশুর জীবনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকেন তাহলে তিনি বাবা বলে গণ্য হবেন। তবে অধ্যাপক কেলি বলেন যে ওই ব্যক্তিকে শিশুটির জীবনে কতটা সংশ্লিষ্ট হতে হবে সে বিষয়ে রায়ে বিস্তারিত বলা হয়নি। যা `আরও অনেক পরিস্থিতির দ্বার খুলবে।’

অধ্যাপক কেলি বলেন, ‘অনেক শুক্রাণু দানকারী ব্যক্তিই শিশুর সাথে কম বেশি মাত্রায় জড়িত; কিন্তু তারা বলেন না যে, তারাই শিশুদের আইনগতভাবে বৈধ বাবা। এই রায় তাদের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এই রুলিং এই নির্দিষ্ট একটি পরিবারের সমস্যার সমাধান দিয়েছে। তবে এর বাইরেও অনেক উদাহরণ রয়েছে। জন্ম সনদে শুক্রাণু দাতার নাম উল্লেখ থাকার ঘটনা খুবই বিরল।’ ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের অধ্যাপক বেলিন্দা ফেহলবার্গ বলেন, আরও অনেক আইনি অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এই মামলা। তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবার রয়েছে যারা হাইকোর্টের এই রায়ের বিষয়ে খুবই সতর্ক রয়েছেন।’

সূত্র: বিবিসি

এমএস/এসি