ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

এ কোন বাংলাদেশ, অবাক ক্রিকেট বিশ্ব!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৪৭ পিএম, ২১ জুন ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৩:১৩ পিএম, ২১ জুন ২০১৯ শুক্রবার

হলোনা বিশ্ব রেকর্ড করে দুর্দান্ত জয়। লড়াই করেই হার। তাতে কি, চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়ে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে বাংলাদেশ, ছড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজনা।

ক্রিকেট বিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে নতুন এই বাংলাদেশকে। এ কোন বাংলাদেশ!

ভারত বাদে এশিয়ার অপর দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ডের মাটিতে যেখানে রীতিমত খাপি খাচ্ছে, সেখানে উপুর্যুপরি লড়াই করে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বাংলাদেশ দল। এ পর্যন্ত নির্ধারিত কোটার ছয়টি ম্যাচ শেষ হলেও মাশরাফি বাহিনী মাঠে খেলতে পেরেছে পাঁচটি। যার সবকটিতেই দুর্দান্ত প্রতাপে লড়াই করেছে টাইগাররা।

যার মধ্যে মাশরাফির মতে, ভাগ্যের সহায় ছাড়াই বাংলাদেশ জিতেছে দুটি ম্যাচ। দুটিতেই সর্বোচ্চ মানের পারফরমেন্স দেখিয়ে। প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩৩০ রানের স্কোর করে তুলে নেয় দুর্দান্ত জয়। আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে (৩২২ রানের) বিশ্বকাপের রেকর্ড রান চেজ করে জয়টা তো ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

আর যে তিনটিতে হেরেছে, সেখানেও দুর্দান্ত লড়াই করে কাঁপিয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষের ভিত। যেখানে অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে ম্যাচগুলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে হেরেছে তাতে বোর্ডে যদি আর কিছু রান হত! সেই আফসোসে মাশরাফি-সাকিবরা নিজের যেমন পুড়েছে, তেমনি পুড়িয়েছে ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে।

পরে ইংল্যাডের বিপক্ষেও দারুণ লড়াই করেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরির জবাব সেঞ্চুরি দিয়েই দিয়েছে টাইগাররা। বাকি ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে হয়েছে পয়েন্ট ভাগাভাগি।

আর ২০ জুন বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচটি তো রীতিমত কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। টস জিতেই ব্যাটিং নিয়ে শুরু থেকেই বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করে অজিরা।

তবে তারা সাড়ে তিনশ রানকেও নিরাপদ ভাবতে পারেনি। তাইতো শেষ দিকে আরো চালিয়ে খেলে চারশ`র কাছাকাছি স্কোর দাঁড় করাতে চেয়েছে। মাশরাফি গংদের বোলিং দুর্বলতায় সে লক্ষ্য ছুঁতেও পেরেছে অজিরা।

জবাবে বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিরা প্রবল প্রতাপে ব্যাটিং করে দেখিয়ে দিয়েছে যে, হ্যাঁ সাড়ে তিনশ রান তোমাদের জন্য সেফ জোন নয়। তোমরা যদি সাড়ে তিনশ করতে, আমরা তা টপকে যেতাম। তার প্রমাণ হচ্ছে, পাঁচবারের ও ডিফেন্ডিং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ৩৮১ রানের বিপরীতে মাত্র ৪৮ রানে হার মানে বাংলাদেশ।

যা অভাবনীয়, কেউই ভাবতে পারেনি যে, বাংলাদেশ এতটা ফাইট দিতে পারবে। কিন্তু যারা ভাবতে পারেনি, তাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে টাইগাররা।

বিশ্ব ক্রিকেটে এই লড়াকু মনোভাবের জন্য বিশ্বের নামী-দামী ক্রিকেট ব্যক্তিত্বদের সমীহ ও সহানুভুতিও আদায় করেছে বাংলাদেশ। প্রশংসা কুড়াচ্ছে বিশ্বের নামীদামী গণমাধ্যমের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা একের পর এক পোস্ট, টুইট করে বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন। মুশফিক-সাকিবদের বন্দনায় মেতেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের রথী-মহারথীরা।

ব্যতিক্রম নন ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। মাশরাফির দলকে প্রশংসায় ভাসিয়ে তিনি টুইটারে লিখেন, দারুণভাবে রান তাড়া করেছে টাইগাররা। আরো কিছুটা করতে হতো তাদের। তবে যা করেছে এজন্য গর্ব করতে পারে তারা। আসলে অস্ট্রেলিয়া একটু বেশি শক্তিশালী ছিল।

সাবেক অজি অলরাউণ্ডার মাইক হাসি তো বলেই দিলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের একটা অন্যতম বেস্ট দল হতে পারে। তবে টাইগারদের বোলিং বিভাগকে আরেকটু উন্নতির কথা বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশের এ লড়াইয়ে মুগ্ধ ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’খ্যাত শোয়েব। তাঁর টুইট, ‘বাংলাদেশ আবারও অবিশ্বাস্য লড়াকু মানসিকতা দেখাল। তারা শেষ কয়েক ওভারে অতিরিক্ত রান দিয়ে ফেলেছে নইলে ম্যাচটা তাদের হাতেই থাকত। বড় রান তারা কীভাবে তাড়া করে সে ব্যাপারে সত্যিই ভালো শিক্ষা পাওয়া গেল।’

শুধু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাই নন, টেলিগ্রাফ, বিবিসি, আনন্দবাজারসহ বেশ কয়েকটি বিশ্বের নামীদামী গণমাধ্যমে চলছে বাংলাদেশ বন্দনা।

গত দু`এক বছর ধরে যে বাংলাদেশ বেশ ধারাবাহিক এবং লড়াকু ক্রিকেট খেলছে এটা যে তারই স্বাক্ষর। আর চলতি বিশ্বকাপে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে তামিম-সাকিব-মুশফিকদের ব্যাটেও। ইতিমধ্যেই তিন তিনটি সেঞ্চুরি পেয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। হাফসেঞ্চুরিও আছে গোটা সাতেক। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে লড়াকু দলীয় পারফরমেন্স।

যা সামনের ম্যাচ গুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে যেমন আত্মবিশ্বাসী স্বয়ং ক্রিকেটাররা, তেমনি বিশ্বাসী নামী দামী ক্রিকেটবোদ্ধারা। আর এই লড়াকু ক্রিকেট খেলেই বাংলাদেশ চলতি বিশ্বকাপের সেমিতে যাবে বলেই আশা করেন মাশরাফি বাহিনী এবং ভক্ত সমর্থকরা।