পাকিস্তানকে এফএটিএফের হুঁশিয়ার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:১৩ পিএম, ২২ জুন ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০১:১৭ পিএম, ২২ জুন ২০১৯ শনিবার
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানকে এ বার চরম হুঁশিয়ারি দিল দ্য ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)।
চার মাসের মধ্যে জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ইসলামাবাদকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার হুমকি দেয় সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চরম হুঁশিয়ারির পরও পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নিলে আর্থিকভাবে বিরাট ধাক্কার মুখে পড়বে ইমরান খানের সরকার। পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিতে পারে বহু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন।
জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থের জোগান-সহ আর্থিক জালিয়াতি, দুর্নীতির মতো বিষয়ে নজরদারি ও তদারকি করে এফএটিএফ। ৩৭টি দেশের সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত এই সংস্থার নির্দেশিকা, হুঁশিয়ারি বা ফরমান কার্যত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলির কাছে শিরোধার্য।
এফএটিএফ-এর এ হুঁশিয়ারি মানে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস দমনে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। জঙ্গিদের আর্থিক সংস্থানের পাইপলাইন কাটতে সব রকম চেষ্টা করতে হবে। না হলে কালো তালিকাভুক্ত করে দিতে পিছপা হবে না এই সংস্থা।
গত বছরের জুনেই পাকিস্তানকে ‘ধূসর তালিকাভুক্ত’ করেছিল এফএটিএফ। সেই সময়ই নির্দিষ্ট করে ২৭টি পদক্ষেপ নির্ধারিত করে দিয়েছিল এই সংস্থা।
তার পর গত বছরের অক্টোবরেই এফএটিএফ-এর প্লেনারি-তে এই নিয়ে পর্যালোচনা হয়। নির্ধারিত করে দেওয়া বন্দোবস্তগুলির মধ্যে পাকিস্তান কোন কোন ব্যবস্থা নিয়েছে, ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে আরও এক বার তা নিয়ে পর্যালোচনা হয়।
পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করেনি বলে সেই সময় এফএটিএফ-এর হাতে তথ্য-প্রমাণ দিয়েছিল ভারত। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার তথ্য তার মধ্যে ছিল অন্যতম।
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া এবং ভারতের তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়ে সেই সময় পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাতেই রেখে দেয় এফএটিএফ।
ধূসর তালিকাভুক্ত করার সময় যে ২৭টি বন্দোবস্ত বেঁধে দিয়েছিল এফএটিএফ, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরের অক্টোবরে। ফলে নতুন একটি বিবৃতিতে এফএটিএফ পাকিস্তানকে জানিয়ে দিয়েছে, এই অক্টোবরের মধ্যেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত পদক্ষেপ করতেই হবে। তা না করা হলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
এফএটিএফ-এর এই হুঁশিয়ারির পর পাকিস্তান আরও চাপে পড়েছে। ‘সন্ত্রাসের মদতদাতা’ বলে এমনিতেই সারা বিশ্বে পাকিস্তানের উপরে আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপ রয়েছে। তার সঙ্গে এ বার এফএটিএফ-এর এই পত্রাঘাতে ইমরানের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়াটা স্বাভাবিক।
কারণ কালো তালিকাভুক্ত হলে ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড (আইএমএফ) বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোও বন্ধ করে দেবে আর্থিক সাহায্য। মুডিজ, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস, ফিচ-এর মতো ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলির বিচারে খারাপ রেটিং উঠে আসবে।
তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে। ফলে ঋণভারে জর্জরিত এবং বিদেশি আর্থিক সাহায্যের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল পাক অর্থনীতির মেরুদণ্ডই কার্যত ভেঙে যাবে।
সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষেত্রে যে বিরাট প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে, ইসলামাবাদের পক্ষে সেই ধাক্কা সামলানো কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশ।
এমএইচ/