মুদ্রণ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৮ পিএম, ২২ জুন ২০১৯ শনিবার
মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইজ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার আমদানির শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে ছয়টি সংগঠন। বর্তমানে এ সব পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশে পেপার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতি, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ, মেট্রোপলিটন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। এতে বাংলাদেশ পেপার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভরসা, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল প্রমুখ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইজ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে এসব পণ্য বৈধভাবে দেশে খুব কম আসছে। ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। আমদানি শুল্ক কমানো হলে এখান থেকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং অবৈধভাবে এসব পণ্য নিয়ে আসার প্রবণতা কমবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইজ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ, এটিডি ৪ শতাংশ এবং এআইটি ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রেখে শুধু আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করলে সরকার লাভবান হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশে যে কাগজ শিল্প গড়ে উঠেছে, সেগুলোতে শুধু ছাপা ও লেখার কাগজ, নিউজ প্রিন্ট, মিডিয়া ও লাইনার পেপার, সিগারেট পেপার, টিস্যু পেপার ও নিম্নমানের বোর্ড উৎপাদিত হয়।
অন্যদিকে উল্লেখিত কাগজ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে এখনও কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি। সুতরাং আমদানি করা ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইজ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার কোনোভাবেই আমাদের স্থানীয় কাগজ উৎপাদনকারী শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। আমদানি করা এ সব কাগজ ও বোর্ড দেশীয় মুদ্রণ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শহীদ সেরনীয়াবাদ বলেন, মুদ্রণ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারিত আছে। এটা কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে দেখলাম শুল্ক হার ২৫ শতাংশই বহাল রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমদানি করা পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এখানেও সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এই খাতের ব্যবসায়ীরা অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন অবৈধ ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, আমদানি শুল্ক কমিয়ে বৈধভাবে আমদানি করে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হলে এই ধরনের অরাজকতা তৈরি হয় না। সুষম ব্যবসা হবে এবং সরকার এখান থেকে ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়বে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, বোর্ডের ৩৭ কোটি পাঠ্যপুস্তকের যে কাভার পেজ তৈরি করে মুদ্রণ শিল্প সমিতি, সেটাও বৈধভাবে আমদানি হয় না। দেশে নোট বইসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২শ’ কোটি বই ছাপানো হয়; সিরাপ ওষুধের কাভারের কাগজ, বার্ষিক দিনপঞ্জির কাগজও দেশে তৈরি হয় না। এসব কাগজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
তোফায়েল খান বলেন, কাভারের কাগজ দেশে উৎপাদিত হয় না বলে আমদানি করতে হয়। দেশীয় কাগজ কলগুলোতে কেবল লেখা ও ছাপার কাগজ প্রস্তুত করা হয়। আমদানি শুল্ক কমালে দেশীয় শিল্পও লাভবান হবে।
বন্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে কিছু পরামর্শ তুলে ধরে শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, এতে বাজার স্থিতিশীল হবে, সরকারি রাজস্ব বাড়বে এবং এদেশের মুদ্রণ শিল্প বিকশিত হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পাল্প তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় কাঠ ও বাঁশ ইত্যাদি। পেপার মিলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাল্প। মুদ্রণ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় কাগজ, বোর্ড, আর্ট কার্ড, ছাপার কালি ও গ্লু ইত্যাদি। এমতাবস্থায় অন্যান্য দেশীয় শিল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যে হার বিদ্যমান আছে, মুদ্রণ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সেই হারে শুল্ক পরিশোধ পূর্বক কাগজ আমদানির সুযোগ দানের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
আরকে//