ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

এবার টাইগারদের প্রতিপক্ষ কি শুধুই আফগানিস্তান?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩৪ পিএম, ২৩ জুন ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৩:৩৮ পিএম, ২৩ জুন ২০১৯ রবিবার

চলতি ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচের সবকটিতেই হারতে থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা হয়তো কঠিন হবে না বলেই ধরে নিয়েছেন অনেকে। কারণ, দু’দলের সাম্প্রতিক নৈপুণ্যই যে টাইগারদের পক্ষে। সোমবার আফগানদের বিপক্ষে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে মাঠে নামবে টাইগাররা। তবে এই ম্যাচে কেবল আফগানিস্তানই নয়, টাইগারদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে আরো কয়েকটি বিষয়ও।

সেই বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে- সাউদাম্পটনের `রোজবোল মাঠ`। কারণ টাইগারদের বিপক্ষে নামার আগেই রোজবোলের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে আফগানদের। শনিবার ভারতের বিপক্ষে তারা এই মাঠেই খেলেছে। তবে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের যা পারফরম্যান্স, বিশেষ করে যে শক্তিতে তারা আলোচিত সেই স্পিনারদের যা হাল, তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বাংলাদেশের।

কেননা, ইংলিশদের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই ৩৯৭ রান দিয়েছে আফগানরা। তুরুপের তাস রশিদ খান ৯ ওভারেই দিয়েছেন ১১০ রান, খেয়েছেন রেকর্ড ১১টি ছক্কা। কিন্তু রশিদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যটসম্যানদের অমন দাপটের নজির নেই। তাছাড়া রশিদ যে মানের লেগ স্পিনার, তাতে তার খারাপ দিন চলতেই থাকবে- এমনটা ভাবাও বোকামি। কাল ভারতের বিপক্ষে তার প্রমাণও দিয়েছে সে। 

এদিকে সাউদাম্পটনের রোজ বোল মাঠের আকারও একটা ফ্যাক্ট। কারণ হলো- ইংল্যান্ডের বড় মাঠগুলোর একটি রোজবোল। বড় মাঠে স্পিনাররা তুলনামূলক বেশি কার্যকরী। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতেও আফগান স্পিনারদের কার্যকারিতা সে কথাই বলছে। তবে এক্ষেত্রে সুবিধা পাবে বাংলাদেশও। রোজবোলে সাকিব-মিরাজ হতে পারেন দলের বোলিংয়ের মূল ভরসা।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে- সাইফুদ্দিন বিতর্ক। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরকে ঘিরেই যত উত্তাপ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাকি ‘চোটের ভান’ করে খেলতে নামেননি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সফলতম বোলার যে তিনিই। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট। ডেথ ওভারে দারুণ বল করেন বলে রুবেল হোসেনকে বসিয়ে তাকে খেলিয়ে যাচ্ছিল দল। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগের দিন আচমকা জানা যায়, পিঠের চোটে পড়েছেন এই পেস অলরাউন্ডার।

টনটনে ম্যাচ খেলে আসার পরও যে চোট কারো নজরে আসেনি, নটিংহ্যামে আসতেই তা কোথা থেকে এলো?- তা নিয়েই সংশয়। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের যেকোনো সময় চোট অনুভব হতেই পারে না। যার শরীর কেবল তিনিই বলতে পারবেন তার ব্যথা কত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তের ভার খেলোয়াড়দের উপরই ছাড়া হয়। সাইফুদ্দিনের উপর সে সিদ্ধান্তের ভার দিয়েও টিম ম্যানেজমেন্ট যে সন্দেহমুক্ত নয়, গোপন সূত্রে তা আগেই জানা গেছে। সাইফুদ্দিনের ঘটনা সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক। বিশ্বকাপের এই পর্যায়ে তা বাংলাদেশ দলের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। কেননা বিশ্বকাপে এখন সব ম্যাচই যে বাংলাদেশের মরা-বাঁচার।

তৃতীয় ফ্যাক্ট হচ্ছে- ঢিলেঢালা ফিল্ডিং। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। অতো বিশাল লক্ষ্য হওয়ায় কেউ তাদের খামতি দেখছে না। বোলিংয়ের হতশ্রী দশা নিয়ে সমালোচনা আগেই হয়েছে। কিন্তু যেটা এড়িয়ে গেছে সেটা হলো ফিল্ডিং। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে ফিল্ডিং দল বাংলাদেশ কিনা, এই প্রশ্নও ওঠার অপেক্ষা। একদম শুরুর ম্যাচ থেকে দলের ফিল্ডিং মোটেও ধারাবাহিক ছিল না। ক্যাচ পড়েছে নিয়মিত। ফিল্ডিংয়ে ক্ষিপ্রতার অভাব দেখা গেছে ভীষণ। বল গড়িয়ে যাচ্ছে, আরেকটু বাড়তি তাদিগ নিয়ে ডাইভ দিচ্ছেন না কেউ। বল ধরে থ্রো করতে দেরি হচ্ছে, একের জায়গায় দুই আর দুইয়ের জায়গায় হয়ে যাচ্ছে তিন রান। ঠিকঠাক জাজমেন্টের ঘাটতিও চোখে লাগার মতো। সেদিন ডেভিড ওয়ার্নার যেমন জীবন পান দু’বার। মাত্র ১০ রানে তার ক্যাচ ফেলেন সাব্বির রহমান। ফিফটি পেরুনোর পর সেই সাব্বিরই আবার ওয়ার্নারকে রান আউট করতে ব্যর্থ।

অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য সেদিন ম্যাচ শেষে স্বীকার করেন, দলের অনেকের ছোটখাটো চোট সমস্যা থাকাতেও ফিল্ডিংয়ে প্রভাব পড়ছে। আফগানিস্তান ম্যাচে তাই বাংলাদেশের ফিল্ডিং আর শরীরী ভাষা থাকবে উদ্বেগের কারণ হয়ে।

এ বিষয়গুলো আমলে নিলেও আফগানদের বিপক্ষে আসলে অনেকখানি এগিয়ে বাংলাদেশ। সব বিভাগ মিলিয়ে শক্তিতে এগিয়ে, র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে তো বটেই। ব্যাটিং দিয়ে এখন পর্যন্ত মাত করা বাংলাদেশের তুলনায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে আফগানরা। নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ খারাপ খেলেনি। যদিও হারের পর সেমিফাইনাল কঠিন হয়ে পড়ায় হতাশ টাইগার শিবির। তবে দুর্দান্ত লড়াকু খেলার ধরনে গোটা দুনিয়ারই বাহবা পেয়েছে বাংলাদেশ দল।

 

 টিআর/