কি হচ্ছে বিশ্বকাপে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪২ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার
১৯৯২ সালের মত চলতি ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের খেলাগুলো হচ্ছে রাউন্ড রবিন লীগ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ অংশগ্রহণকারী সবগুলো দলই মোকাবেলা করছে একে অপরকে। এতে যেমন বড় দলগুলো নাকানি-চুবানি খাচ্ছে, তেমনি বড় দল-ছোট দল বলে কিছুই থাকছে না। ফলে সেমির দৌড়ে দলগুলোর মধ্যে দারুণ এক লড়াই জমে উঠেছে। সেইসঙ্গে হয়েছে বেশ কিছু রেকর্ড। আসুন, দেখে নেই সে সব বিষয় গুলো-
দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ডের মত বড় দলগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের কাছে হারার কারণে একপেশে অবস্থা থেকে জটিল হয়ে গেছে সেমিতে যাওয়ার সমীকরণ। যেমন ধরুন- বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের কাছে হেরে এরইমধ্যে সেমির লড়াই থেকে ছিটকে গেছে অপেক্ষাকৃত বড় দল প্রোটিয়া ও উইন্ডিজ।
আবার, চলতি আসরে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে থাকা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে অঘটনের শিকার হয়েছে দুর্দান্ত খেলতে থাকা হট ফেভারিট তকমা গায়ে জড়ানো স্বাগতিক ইংল্যান্ড। পরের ম্যাচে হেভিওয়েট অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে দলটি এখন সেমির লড়াই থেকে ছিটকে পড়ার অবস্থায়। এর আগে অবশ্য পাকিস্তানের কাছেও হেরেছে মরগানের দল।
ফলে চলতি বিশ্ব-আসরে বড় দল, ছোট দল বলে কিছুই থাকছে না। আবার দুর্বল দল বলেও কিছুই থাকছে না, এক আফগানিস্তান ছাড়া। যদিও ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে এশিয়ার নবাগত এই দলটি। এক কথায় ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে ভারতকে। বলতে হয়, শুধু অভিজ্ঞতার জন্যই হেরেছে আফগানরা।
অন্যদিকে, এবার আর ভালো খেলতে নয়, একেবারে সেমির লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বমঞ্চে আসে গত কয়েক বছর ধরে মাশরাফির নেতৃত্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা বাংলাদশ। এসেই যে একেবারে বাজিমাত করেছে তা বলা যাবে না। তবে এখন পর্যন্ত যা খেলেছে, যা করেছে তাতে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তিনটি করে জয়-পরাজয়ে সাত ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে সেমির রেসে।
শুধু তাই নয়, রীতিমত প্রশংসায় ভাসছেন টাইগার ক্রিকেটাররা, বিশেষকরে সাকিব আল হাসান। এমনকি বিশ্বের যে কোন দলের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে সেমির দৌড়ে এগিয়ে গেছে অনেকখানিই। সামনের দুটি ম্যাচ জিতলেই সেমি নিশ্চিত টাইগারদের।
এবারের বিশ্বকাপে আপসেট বা অঘটন বলতে ওই একটিই বলা যায়। আর তা হলো- শ্রীলঙ্কার কাছে এ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া দুরন্ত দুর্বার ইংল্যান্ডের হার। যেটা কেউ ভাবতেও পারেনি, ঠিক সেটাই করে দেখালো দুই বুড়ো `ম` তথা মালিঙ্গা ও ম্যাথিউজ। মূলত এই দুই সিনিয়রের অনবদ্য পারফরম্যান্সেই হেরেছে ইংল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে ম্যাথিউজের অপরাজিত ৮৫ এবং বল হাতে জ্বলে ওঠা বুড়ো মালিঙ্গার ৪ উইকেট শিকারেই ধরাশায়ী হয় ইংলিশরা।
এছাড়া চলতি আসরে ইতিমধ্যেই হয়েছে নতুন নতুন কিছু রেকর্ড। এবারের আসরটি মূলত ব্যাটসম্যানদের আসর হলেও কম যাচ্ছেন না বোলাররাও। যদিও এখন পর্যন্ত মাত্র একটি হ্যাটট্রিক হয়েছে। যেটা করেছেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি, আফগানদের বিপক্ষে। তবে পাঁচ বা ততাধিক উইকেট শিকার করেছেন এখন পর্যন্ত পাঁচজন। তারা হলেন, মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া), মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান), জিমি নিশাম (নিউজিল্যান্ড), সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ও বেহরেন্ড্রফ (অস্ট্রেলিয়া)।
এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারির তালিকার প্রথমে আছেন মিচেল স্টার্ক। অজি পেসারের পরেই আছেন জোফরা আর্চার, মোহাম্মাদ আমির, লকি ফার্গুসন ও মার্ক উড যথাক্রমে ১৬, ১৫, ১৪ ও ১৩টি করে উইকেট নিয়ে। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আছেন ১০ উইকেট নিয়ে তালিকার নয় নাম্বারে।
অন্যদিকে, ব্যাটিংয়েও আলো ছড়িয়ে রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এরইমধ্যে বিশ্বকাপে পূর্ণ করেছেন এক হাজার রানের মাইলফলক। শুধু তা-ই নয়, এই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি আর পাঁচ উইকেট নিয়ে নাম লিখিয়েছেন কিংবদন্তী কপিল দেব ও যুবরাজ শিং-এর কাতারে। বিশ্বকাপে এই রেকর্ড শুধু এই তিনজনেরই। এছাড়া একই ম্যাচে ফিফটি ও পাঁচ উইকেট নেয়া সাকিবই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ক্রিকেটার, যিনি ভাগ বসিয়েছেন যুবরাজের রেকর্ডে।
এছাড়া এ বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান উঠেছে ৩৯৭। আফগানদের বিপক্ষে ইংলিশরা করেছে এই বিশাল রান। আর সর্বনিম্ন স্কোর পাকিস্তানের, ১০৫। আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে সর্বোচ্চ ইনিংস ডেভিড ওয়ার্নারের, ১৬৬। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই, ৫০০ রান। সর্বোচ্চ জুটি দুই অজি ওয়ার্নার ও খাজার ১৯২ রানের। এরপরই আছে দুই টাইগার সাকিব-লিটনের অপরাজিত ১৮৯ রানের জুটি, উইন্ডিজের বিপক্ষে।
এ আসরে এখনও বেশকিছু ম্যাচ বাকি। তাই আরও বেশ কিছু জয়-পরাজয়, অঘটন ও রেকর্ড হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।