টিকা দেওয়ায় ইউরোপের চেয়ে বাংলাদেশের আস্থা বেশি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:১৩ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৬:১৬ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার
উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক বেশি। এমন ধারণাটা ভুল প্রমানিত হয়েছে। এক জরিপ বলছে, টিকা দেওয়ায় আস্থা ইউরোপে সবচেয়ে কম আর বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডায় সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বের ১৪৪ টি দেশের ১৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সি এক লাখ ৪০ হাজার মানুষকে নিয়ে একটি জরিপ করেছে গ্যালপ ওয়ার্ল্ড পোল এবং ব্রিটেনভিত্তিক সংস্থা ওয়েলকাম ট্রাস্ট।
জরিপে দেখা গেছে, টিকা দেওয়ার প্রতি আস্থা ইউরোপ ও বিশ্বের কিছু ধনী দেশে সবচেয়ে কম। এমন দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে কম। সে দেশের ৩৩ ভাগ মানুষ টিকা দেয়াকে নিরাপদ মনে করে না। টিকার প্রতি আস্থা বাংলাদেশ আর রুয়ান্ডায় সবচেয়ে বেশি। এই দুটি দেশে শতকরা প্রায় একশ ভাগ মানুষই মনে করে যে টিকা দেয়া ভালো এবং টিকা দিলে শিশুরা সুস্থ থাকে। টিকা দেয়ায় সবচেয়ে কম আস্থা পশ্চিম ইউরোপে। এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ২২ ভাগই টিকা দেয়াকে নিরাপদ মনে করে না। পূর্ব ইউরোপে এই হার শতকরা ১৭ ভাগ।
সারা বিশ্বে টিকা দেয়ার প্রবণতা এখনো কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছেনি। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে হামের টিকা দেয়া হয়নি।
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন:
শিশুর টিকা:
শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে হুপিং কাশি, দিপথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, হাম, মাম্স এবং জলবসন্তের টিকা ইত্যাদি অবশ্যই দিতে হবে। তাছাড়া আরও কিছু টিকা রয়েছে যেগুলো পরে কিশোর বয়সে আবারও নতুন করে দিতে হয়। শিশুর স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি টিকাই নির্দিষ্ট সময়ে দেয়া প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
কিছু শিশুরোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্মক। যেমন হাম। জার্মানির শিশু-কিশোর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ডা. এসারের ভাষায়, ‘অনেকের ধারণা হাম ক্ষতি করে না। অথচ এটি একটি সংক্রমণ রোগ, যা নার্ভ বা স্নায়ু সিস্টেমকে আক্রমণ করতে পারে। হামের পর শতকরা ১০ জন শিশুর মস্তিষ্কের তরঙ্গে পরিবর্তন হয় আর অন্তত একজনের মাথায় থেকে যায় মানসিক ব্যাধির লক্ষণ।
শিশুর জ্বর:
প্রায়ই দেখা যায় কোনো অসুখ হওয়ার আগে শিশুদের জ্বর হয়। তাই জ্বরকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া বা নিজে থেকে জ্বরের ওষুধ দেয়া কখনোই উচিত নয়। তবে এক শিশুর জ্বর হওয়ার আগে যদি তার বড় বা ছোট ভাই-বোনের ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে দু-একদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে।
পান করতে না চাইলে:
শিশুদের শরীরে তরল মজুদ রাখার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই শিশু জল বা অন্য কোনো পানীয় পান করতে না চাইলে, খুব তাড়াতাড়ি শিশুদের শরীরের ভেতরটা শুকিয়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই শিশু পান করতে না চাইলে বা অনেকটা সময় কোনো তরল পদার্থ পান না করে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
কথা না বলা, না হাঁটা, খেলা না করা বা কানে কম শুনছে মনে হলে খুব বেশি চিন্তা না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই শ্রেয়। কারণ সব শিশু একই বয়সে একই কাজ করে না। কেউ হয়ত ১০ মাস বয়সেই হাঁটতে শুরু করে আবার কেউ ১৪ মাসেও হাঁটে না। তাছাড়া অনেক শিশু হামগুড়ি না দিয়েই হাঁটতে শুরু করে। এ বিষয়গুলো অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়ে থাকে।
অযথা অসুখ খুঁজবেন না:
‘অকারণে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না। তবে কোনো কিছু অন্যরকম মনে হলে বা কোনো দ্বিধা থাকলে প্রয়োজনে নিজের মা বা মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। সারাক্ষণ শিশুকে অসুস্থ মনে করলে বা সে কথা তাকে বললে, তা শিশুমনে প্রভাব ফেলে৷ এবং পরবর্তীতে শিশুকে তা সত্যিই মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে।’ বলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এসার।
নিজের মতো চলতে দিন:
নিজের ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ডা. এসার বলেন, ‘ছোটখাটো ব্যাপারে শিশুকে বিরক্ত না করে, তাকে তার মতো চলতে এবং অন্য শিশুদের সাথে খেলতে দিন। খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, ওরা হয় ওঠে আত্মবিশ্বাসী। লক্ষ্য রাখুন শিশুর আগ্রহ কোন দিকে। কারণ বেশি জোড় করলে শিশু মনে তার প্রভাব পড়ে এবং মনোজগতে ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়।’
মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরে রাখুন:
একটা শিশু কিন্তু বুঝতে পারে না, কী কারণে তার মা অন্যের সাথে টেলিফোনে বা সরাসরি বাবার বদনাম বা সমালোচনা করছেন। শিশুরা এ সব নিয়ে কোনো প্রতিবাদ বা আলোচনা করতে পারে না ঠিকই, তবে শিশুমনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক দ্বন্দ্ব। তাই দাম্পত্য কলহ কখনই শিশুদের সামনে নয়! মা-বাবার ঝগড়া সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এমএস/এসি