ছাত্রদল নিয়ে অস্থিরতায় বিএনপি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২৫ পিএম, ২৭ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন ও ১২ নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের ঘটনায় কয়েকদিন ধরেই চলছে অস্থিরতা। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় দেশের অন্যতম দল বিএনপি। এ নিয়ে কেউ কেউ হয়েছেন নাজেহাল।
ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে ১৫ জুলাই কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রদলের একাংশ।
তাদের দাবি, বহিস্কার প্রত্যাহার ও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা চাচ্ছেন, বয়স্ক ছাত্র নেতাদের যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে পদায়ন করে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়েই কমিটি করতে। এদিকে আন্দোলনকারী ছাত্রদল নেতাদের পেছনে কিছু নেতার ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে অক্টোবরে রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটি পাঁচ বছর পর ভেঙে দেওয়া হয় চলতি বছরের ৩ জুন। এরপর রেবাবার পরবর্তী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১১ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আন্দোলন করছে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির একাংশ। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে প্রার্থী হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার যে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তুলে দেওয়ার দাবি করেন।
এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টির নিষ্পত্তি করে স্থায়ী কমিটিকে নির্দেশনা দিলেও এর কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দীর্ঘদিন ছাত্রদলের কমিটি গঠনের কোনো প্রক্রিয়া ছিল না। এরপর ঈদের আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভেঙে দেওয়া ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা বয়সসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তখন তারা সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা বললেও এখন মানছেন না। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কারণ পেছনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতার ইন্ধন রয়েছে।
প্রধান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, দীর্ঘদিন পর ছাত্রদলের কমিটি গঠনে একটি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এখানে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে এসব বলা যাবে না। বরং দলের সবাই একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এখন থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি কমিটি হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘আমরা ভেসে আসিনি। আমাদের সঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আছেন। এভাবে চলতে থাকলে নির্ধারিত ১৫ জুলাই কাউন্সিল তো করতেই পারবেন না। বরং লাঞ্ছিত হবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কারণ আমাদের জীবন ধ্বংস করে তারা ভালো থাকতে পারবেন না।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি ইখতেয়ার মাহমুদ কবির বলেন, আমাদের ১২ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। বলা হচ্ছে-প্রিয় নেতা তারেক জিয়ার নির্দেশে এ বহিষ্কার। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি নেতাকে ভুল বুঝিয়েছে সিন্ডিকেট। যে কারণে নেতার কোনো স্বাক্ষর ছাড়াই বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয়েছে। তাই আমরা দাবি করছি ঘোষিত কাউন্সিল বাতিল করে পুনঃতফসিল দিতে হবে। সেই সঙ্গে ছাত্রদলের বয়সসীমা বাতিল করতে হবে।
আন্দোলনের বিষয়ে কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাতে ভেঙে দেওয়া ছাত্রদল নেতাদের পাশাপাশি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও সম্মতি আছে। এখন বাইরে অনানুষ্ঠানিকভাবে কে কী করছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কিছু নেই। এরপরও কেউ করলে দলের হাইকমান্ড খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এনএম//