ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

বৈধ গাঁজার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল: স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ২৭ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বিশ্বের নামজাদা কোম্পানিগুলো ক্যানাবিজ বা বৈধ গাঁজা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গাঁজার বাজার ১৫ হাজার কোটি ডলার (১১ হাজার ৯০০ কোটি পাউন্ড) ছাড়িয়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান গাঁজার বাজার দখলে নিতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ওষুধ, টোব্যাকো ও পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেটিংস সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স নিজেদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বৈধ গাঁজা ক্রমে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে বলে জানিয়েছে। বৈধ গাঁজার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে পণ্যটির বাজারও সম্প্রসারিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ফ্রেমওয়ার্কের পরিবর্তনের কারণে বৈধ গাঁজার বাজার খানিকটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ভোক্তার পরিবর্তিত চাহিদার কারণে মাদকদ্রব্যমিশ্রিত পানীয়, কোমলপানীয়, তামাক ও রূপচর্চার মতো খাতগুলো সম্প্রসারিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

ফিলিপ মরিস সিগারেটসের মালিকানাধীন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টোব্যাকো কোম্পানি এল্টরিয়া ও কোরোনা বিয়ারের মালিকানাধীন কনস্টেলেশন ব্র্যান্ডস বৈধ গাঁজাজাত পণ্যে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কোম্পানি দুটির প্রত্যেকে গাঁজাজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গাঁজা এক ধরনের উদ্ভিদ, যাতে মন ও মেজাজকে প্রভাবিত করার মতো টেট্রাহাইড্রোকানাবিনল (টিএইচসি) বা এক ধরনের নির্যাস ও কানাবিডিওল (সিবিডি) রয়েছে। চিকিৎসায় সিবিডি কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন।

নতুন প্রজন্মের পণ্য হিসেবে বৈদ্যুতিক সিগারেট, নানা স্বাদের কফি ও গাঁজার নির্যাসসম্পন্ন পানীয় জনপ্রিয় হওয়ায় মূল ধারার কোমলপানীয় ও টোব্যাকো কোম্পানির বর্তমান ব্যবসাগুলো সম্প্রতি খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছে। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় পণ্যগুলোর বাজার নিজেদের দখলে নিতে বড় কোম্পানিগুলো চেষ্টা করছে বলে উল্লিখিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শুধু অ্যালকোহলকেন্দ্রিক পণ্যেই গাঁজার চাহিদা বাড়ছে, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। যেসব কোম্পানি গাঁজার উপাদানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করতে আগ্রহী, সেগুলোর মধ্যে অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক পানীয় কোম্পানি, স্বাস্থ্য ও রূপচর্চা-বিষয়ক পণ্য তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ও সিগারেট উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউরোমনিটরের সমীক্ষার দোহাই দিয়ে বিশ্বব্যাপী গাঁজার ১৫ হাজার কোটি ডলারের বাজার রয়েছে বলে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যার ৯০ শতাংশই অবৈধ। ২০২৫ সাল নাগাদ বৈধ গাঁজার বাজার ১৬ হাজার ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ইউরোমনিটরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভোগ্যপণ্য তৈরিকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমবর্ধমান বৈধ গাঁজার বাজার দখলের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এসব কোম্পানি হয়তো সরাসরি নিজেদের পণ্য আকারে বা যেসব ছোট কোম্পানির গাঁজাজাত পণ্য উৎপাদনে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেসব কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে গাঁজাজাত পণ্য বাজারে আনতে পারে বলে বলা হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স-এর প্রতিবেদনে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ-বিষয়ক আইন ক্রমবর্ধমান গাঁজাজাত পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলেও সাবধান করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

তিনটি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্য ডাক্তারের অনুমতিসাপেক্ষে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করেছে। গাঁজাজাত পণ্য বাজারজাত আরো ব্যাপক হলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এসব পণ্যের বিশাল বাজার তৈরি হতে পারে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বেআইনি গাঁজার বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলারের।

গাঁজাজাত পণ্য বাজারজাত বৈধ হলে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অঞ্চলে বিশাল বাজার তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিম ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় গাঁজা বাজারজাতের বিষয়টি এখনো এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে শুধু উরুগুয়েতে গাঁজাকে বৈধ করা হয়েছে। এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গাঁজাজাত পণ্য বৈধকরণের ব্যাপক আলোচনা ও গবেষণা চলছে। ২০১৮ সালে কানাডা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহার বৈধ ঘোষণা করেছে। দেশটি খাবারযোগ্য গাঁজাও বৈধ ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

আরকে//