ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১২ ১৪৩১

ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে বড় জয় পেয়েছে ভারত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৮ এএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার

নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৫ রানের বড় জয় পেয়েছে ভারত। ২৬৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গড়তে পারেননি ক্যারিবিয়ানরা। মাত্র ৩৪ ওভার ২ বলে ১৪৩ রানে অলআউট হওয়ার মধ্য দিয়ে সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই হারলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের পক্ষে মোহাম্মদ সামি চার উইকেট এবং বুমরাহ ও চাহাল তুলে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।

এই জয়ের ফলে ছয় ম্যাচ থেকে পাঁচ জয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেছে ভারত। প্রথমবারের মতো তৃতীয়স্থানে নামলো নিউজিল্যান্ড। দলটি প্রথম থেকে পয়েন্ট টেবিলে রাজত্ব করছিলো। সাত ম্যাচ থেকে তাদের পয়েন্টও ১১। টেবিলের শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট সাত ম্যাচে ১২।

এর আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি। প্রথমে ব্যাট করে কোহলি ও ধোনির অর্ধশতকে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৬৮ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।

অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও সাবেক দলপতি মহেন্দ্র সিং ধোনির জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে দ্বাদশ বিশ্বকাপের ৩৪তম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৮ রান করেছে ভারত। কোহলি ৭২ রানে আউট হলেও ও ধোনি ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

ম্যানচেষ্টারে টস জিতে প্রমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি। এ ম্যাচে ভালো শুরু করতে পারেনি ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪০ রানের ইনিংসের পর আফগানিস্তানের সাথে মাত্র ১ রান করেন ওপেনার রোহিত শর্মা। এ ম্যাচে ভালো শুরু করেও ১৮ রানে থেমে যান রোহিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমার রোচের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার আগে ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ছোট ইনিংসটি খেলেন রোহিত।
এরপর আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলের সাথে উইকেটে যোগ দেন অধিনায়ক কোহলি। দেখেশুনে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে রান আদায় করে নিচ্ছিলেন তারা। এই জুটির কল্যাণে শতরানের খুব কাছে পৌঁছে যায় ভারত। তবে দলীয় স্কোর শতরান থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে বিচ্ছিন্ন হন রাহুল-কোহলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে থামেন রাহুল। তার ৬৪ বলের ইনিংসে ৬টি চার ছিলো। কোহলির সাথে ৬৯ রান যোগ করেন রাহুল।

রাহুল ব্যর্থ হলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ও এবারের আসরে টানা চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন কোহলি। কোহলির হাফ-সেঞ্চুরির মাঝেই দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান বিজয় শঙ্কর ও কেদার যাদব দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফিরেন। বিজয় ১৪ ও কেদার ৭ রান করে ফিরেন। দু’জনই শিকার হয়েছেন রোচের। এরপর রোহতিকেও বিদায় দিয়েছিলেন তিনি।

১৪০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ধোনিকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন কোহলি। কিন্তু একতে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। এই জুটিকে দলীয় ১৮০ রানে থামিয়ে দেন হোল্ডার। ৮২ বলে ৮টি চারে ৭২ রান করা কোহলিকে শিকার বানান হোল্ডার। তবে এই ইনিংস খেলার পথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে দ্রুত ৪১৭তম ইনিংসে ২০হাজার পূর্ণ করেন কোহলি।

৩৮ দশমিক ২ ওভারে কোহলির বিদায়ের পর ভারতের বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায়। তবে সপ্তম উইকেটে জুটি বেধে ভারতকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেয়ার লড়াই শুরু করেন ধোনি ও হার্ডিক পান্ডিয়া। শুরুতে সর্তক থাকলেও, সময় গড়ানোর সাথে সাথে মারমুখী হতে থাকেন পান্ডিয়া। অপরদিকে, পান্ডিয়াকে স্ট্রাইক দেয়ার চেষ্টা করছিলেন ধোনি।

তাই পান্ডিয়ার ব্যাটিং-এ আড়াইশ রানের কোটা স্পর্শ করে ভারত। আর ঐ স্কোরেই থেমে যান পান্ডিয়া। শেলডন কটরেলের শিকার হবার আগে ৩৮ বলে ৫টি চারে ৪৬ রানে মারমুখী ইনিংস খেলেন পান্ডিয়া।

৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পান্ডিয়া ও পঞ্চম বলে মোহাম্মদ সামিকে তুলে নেন কটরেল। ফলে ৪৯তম ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিলো ৭ উইকেটে ২৫২ রান। তবে শেষ ওভারে জ্বলে ওঠেন ধোনি। নিজে স্ট্রাইক নিয়ে পেসার ওশান থমাসের শেষ ওভারে ২টি ছক্কা ও ১ চারে ১৬ রান নেন ধোনি। ফলে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৮ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। শেষ ওভারের মারমুখী ব্যাটিং-এ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭২তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ধোনি। শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬১ বলে অপরাজিত ৫৬ রান করেন ধোনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোচ ৩৬ রানে ৩টি ও কটরেল-হোল্ডার ২টি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২৬৯ রানের টার্গেট পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই টার্গেটের জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই সর্তক ক্যারিবীয়রা। প্রথম ২৮ বলে মাত্র ১০ রান তোলে তারা। তবে ২৯তম বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন আগের ম্যাচে হ্যাট্টিক করা ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামি। সেঞ্চুরির করার পণ করে নামা ক্রিস গেইলকে ৬ রানে থামিয়ে দেন সামি।

পঞ্চম ওভারের পর সপ্তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আবারো আঘাত হানেন সামি। এবার তিনি শিকার করেন তিন নম্বরে নেমে ৫ রান করা শাই হোপকে। ফলে ১৬ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এ অবস্থায় শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আরেক ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস ও নিকোলাস পুরান। শুরুতে সর্তক থাকলেও দ্রুত উইকেটের মানিয়ে নিয়ে দ্রুত রান তোলার কাজে মনোযোগি হন তারা। এতে জুটিতে অর্ধশতকও পূর্ণ হয়। এরপর এই জুটিতে বিচ্ছিন্ন করে নেন ভারতের মিডিয়াম পেসার পান্ডিয়া। ৪০ বলে ৩১ রান করা অ্যামব্রিস আউট হন পান্ডিয়ার বলে।

দলীয় ৭১ রানে অ্যামব্রিসকে তুলে নেয়ার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরে ভারতীয় বোলাররা। ফলে নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবিয়রা। ৭১ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। অর্থাৎ শেষ ৭ উইকেট হারায় ৭২ রানে। ৩৪ দশমিক ২ ওভার ব্যাট করে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন হওয়া বাকী সাত উইকেটের মধ্যে সামি-জসপ্রিত বুমরাহ-যুজবেন্দ্রা চাহাল ২টি করে ও কুলদীপ যাদব ১টি উইকেট নেন।

অ্যামব্রিসের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন পুরান। এছাড়া শিমরোন হেটমায়ার ১৮, রোচ অপরাজিত ১৪ ও কটরেল ১০ রান করেন। ভারতের সামি ১৬ রান ৪ উইকেট নেন। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : (টস-ভারত)

ভারত : ২৬৮/৭, ৫০ ওভার (কোহলি ৭২, ধোনি ৫৬, রাহুল ৪৮, পান্ডিয়া ৪৬, রোচ ৩/৩৬)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৩/১০, ৩৪.২ ওভার (অ্যামব্রিস ৩১, পুরান ২৮, হেটমায়ার ১৮, সামি ৪/১৬)।

ফল : ভারত ১২৫ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।

এসএ/