ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

গুপ্তছড়া নৌপথে দুই প্রবাসীকে পিটিয়ে ফেলে দিল নদীতে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৪ পিএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:৩১ পিএম, ২৯ জুন ২০১৯ শনিবার

চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার সময় কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌপথে সার্ভিস বোট থেকে দুই প্রবাসীসহ চারজনকে পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, লাল বোটে অতিরিক্ত যাত্রী উঠা নিয়ে বিতণ্ডার জেরে তাদেরকে ঘাটির ইজারাদারের লোকজন পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে দুই প্রবাসী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হামলার শিকার হওয়া ওই চার যাত্রী হলেন মো. মানিক, মো. সোহেল, মো. শিবলু ও মো. শিহাদ ৷ তারা সবাই সন্দ্বীপ মুছাপুর ইউনিয়নের আলীমিয়ার বাজার সংলগ্ন মান্দিরগো বাড়ির বাসিন্দা ও সম্পর্কে সবাই আত্মীয়।

জানা গেছে, দুই প্রবাসী সোহেল ও শিবলু পরিবারসহ চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট থেকে সার্ভিস বোটে করে সন্দ্বীপ যাচ্ছিলেন। সন্দ্বীপের কূলে আসার পর ভাটার কারণে সার্ভিস বোট থেকে যাত্রীদের কূলে নামানোর জন্য আসা লাল বোটে উঠাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোয় সোহেল সেই বোটে উঠতে অস্বীকৃতি জানান। বোটের চালক ও স্টাফরা তাকে নামতে জোরজবরদস্তি শুরু করে। সোহেল অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে নামতে অস্বীকৃতি জানালে স্টাফদের একজন সোহেলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে ৷ বোটের চালক ও স্টাফদের গালির প্রতিবাদ করার পর সোহেলকে ধাক্কা দিয়ে সার্ভিসবোট থেকে লাল বোটে ফেলে দেয়। পরে সেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত শুরু হয়। এরপর তাকে বেধড়ক পেটায়।

সোহেলকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার বাবা ও ছোট দুই ভাইকেও মারধর করে ঘাট ইজারাদারের লোকজন। এ সময় সার্ভিস বোটে থাকা যাত্রীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ইজারাদারের লোকজন লালবোট চালিয়ে সার্ভিস বোট থেকে দূরে সরে যায়। সেখানে ওই অবস্থায় আরেক দফা মারধর করে। পরে কূলের কাছাকাছি এলে একজন কর্মচারী প্রবাসী সোহলকে লাথি দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী আরাফাত রহমান সাব্বির জানান, হঠাৎ করেই দেখি ঘাটের লোকজন মিলে লালবোটে ফেলে একজনকে মেরেছে। ওই লোককে বাঁচাতে ২/৩ জন সার্ভিস বোট থেকে লাফিয়ে লাল বোটে নামে। সঙ্গে সঙ্গে তারা লালবোটটা সার্ভিস বোটের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়। কিছুদূর নিয়ে গিয়ে নৌকা থামিয়ে নদীর মাঝখানে তাদের আবার পেটানো হয়। পরে কূলে নিয়ে লাথি মেরে বোট থেকে ফেলে দেয়।

হামলার শিকার দুবাই প্রবাসী সোহেল জানান, একটি লালবোটে ৬০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়ায় আমি উঠতে রাজি হইনি। এজন্য ওরা আমাকে ও আমার ভাইদের মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে।

এ ঘটনায় কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদার এস এম আনোয়ার হোসেন দেশের বাহিরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।  

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. শরিফুল আলম বলেন, গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রীদের উপর হামলার একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্দ্বীপ উপজেলা ও চট্টগ্রাম শহরে শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। সন্দ্বীপে এবি হাইস্কুল মাঠে ও শহরের হালিশহরে পৃথক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্দ্বীপ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সভায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল গুপ্তছড়া ঘাটে নৌযান উল্টে ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণে ওই নৌ দুর্ঘটনা ঘটে।

কেআই/