রিফাত হত্যার নেপথ্যে ‘বন্ড ০০৭’!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২৯ জুন ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০১:০৮ পিএম, ২৯ জুন ২০১৯ শনিবার
‘বন্ড ০০৭’ এখন আলোচনায়। এই বন্ডের পরিকল্পনাতেই সংঘঠিত হয়েছে রিফাত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু সবার কাছেই এখন একটাই প্রশ্ন কী এই ‘বন্ড ০০৭’।
এই ‘বন্ড ০০৭’ মূলত একটি ফেসবুক গ্রুপ। সম্প্রতি বরগুনায় রিফাত হত্যার ঘটনার তদন্তের মধ্যেই আলোচনায় এসেছে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বন্ড ০০৭ নামে একটি গ্রুপের কিছু আলাপচারিতা।
জেমস বন্ডের কোড নম্বর জিরো জিরো সেভেন এর সঙ্গে মিল রেখেই এই গ্রুপের নাম রাখা হয়েছে ‘০০৭’। এ ফেসবুক গ্রুপেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ গ্রুপের নেতা নয়ন বন্ড যে রিফাত হত্যার হোতা। হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় তিন দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়নি।
জানা যায়, প্রকাশ্য এ হত্যাকারী নয়নের আসল নাম সাব্বির আহম্মেদ নয়ন। নিজেকে জেমস বন্ড ভাবতে ভালোবাসেন বলে ২৫ বছর বয়সী বিপথগামী এ যুবক নিজের নাম নিয়েছেন নয়ন বন্ড। ওই নামেই তিনি বরগুনা শহরে পরিচিত।
তার মোটরসাইকেলে, বাড়ির দেয়ালসহ নানা জায়গায় লেখা রয়েছে বন্ডের সেই ০০৭ কোড নম্বরটি। নয়ন এই কোডের মধ্যেও সীমাবদ্ধ থাকেননি! করেছেন মাদক কেনাবেচা, চুরি, ছিনতাই, হামলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপকর্ম বলে জানিয়েছেন বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মাদ হোসেন।
তিনি জানান, নয়ন পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে।
ওসি আবির মোহাম্মাদ জানান, রিফাত ফরাজী এবং তার ভাই রিশান ফরাজীকে পুলিশ খুঁজেছে।
স্থানীয়রা জানান, নয়ন ০০৭ নামের যে গ্যাং গড়ে তোলেন সেই গ্যাং শহরের কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ চালিয়ে আসছিলেন। নয়নের প্রধান সহযোগী হলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে রিফাত ফরাজী বলে স্থানীয়রা জানান।
বন্ড ০০৭ নামের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তাদের কথোপকথনে দেখা যায়, রিফাত নামে একজন লিখেছেন-‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই’। সাগর নামের একটি আইডি থেকে ওই পোস্ট কপি করে ‘ভিক্টরি’ ইমোটিকন দেখানো হয়। রিফাত ফরাজীকে ট্যাগ করে মোহাম্মদ নামের একটি আইডি থেকে জানতে চাওয়া হয়, কখন কলেজে থাকতে হবে। রিফাত উত্তর দেন, ৯টার দিকে। পরে রিফাত একটি রামদায়ের ছবি পোস্ট করে সেটি নিয়ে আসতে বলেন। উত্তরে মোহাম্মদ সেটি নিয়ে আসবেন বলে জানান। পরে হকিস্টিক আনা এবং কালো শার্ট পড়ে কলেজে যাওয়ার বিষয়েও কথা হয় সেখানে।
ফেসবুক মেসেঞ্জারের ওই কথোপকথনের বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘মেসেঞ্জারের বিষয়টা ঠিক আছে। তবে এ নিয়ে আমি এখন কিছু বলব না।’ আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলব, আমরা অপারেশনে আছি।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে স্ত্রীর সামনেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিফাতের মৃত্যু হয়। হামলার সময় মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক রামদা হাতে রিফাতকে উপযুপরি দা’এর কোপ দিচ্ছে। অন্যদিকে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করছেন। বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ও রিফাতের স্ত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারলেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেছেন।
প্রায় ২ মাস আগে রিফাতকে বিয়ে করেন মিন্নি। বিয়ের আগে থেকেই নয়ন তাকে উত্ত্যক্ত করতেন, হুমকি দিতেন। এমন কি বিভিন্ন সময় চলার পথে হেনস্তাও করেছেন বলে জানা যায়।
গেল বছর শেষ দিকে শহরের দীঘির পাড়ের একটি মেসে (ছাত্রাবাস) হামলা করে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে নয়নের বন্ড ও তার গ্যাং। এরপর ভয়ে মেসের বাসিন্দা অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী মেস ছেড়ে চলে যায়। ‘ছাত্রদের মেস থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনার সালিশের জন্য ডাকায় রিফাত ফারজীর বাবা দুলাল ফরাজীর সামনেই আমার ওপর ওরা হামলার চেষ্টা করে। আমি তখনকার পুলিশ সুপারসহ রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু ওদের কিছুই হয়নি।’ এমনটি বলেছেন ক্রোক স্লুইজ গেইট এলাকার কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম নান্না।
এ দিকে হত্যাকাণ্ডের পর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেণ। অভিযানে নেমে পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি চন্দন, হাসান এবং সন্দেহভাজন নাজমুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিফাতের শোকাহত বাবা দুলাল বলেন, ‘দুই দিন পার হলেও মূল আসামিরা ধরা পড়েনি। আমি আশা করি শিগগিরই তারা ধরা পড়বে, আমি আমার ছেলের হত্যার ন্যয়বিচার পাব।’
হত্যাকারীদের ইতোমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে এবং পুলিশ কাউকে ছাড় দেবে না বলে শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এমএস/