আজ পাস হচ্ছে দেশের ইতিহাসের বড় বাজেট
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫০ এএম, ৩০ জুন ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১২:২১ পিএম, ৩০ জুন ২০১৯ রবিবার
দেশের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় বাজেট পাস হচ্ছে আজ রোববার। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জন্য ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে জাতীয় সংসদে।
এর আগে শনিবার বড় ধরনের কোনো সংশোধনী ছাড়াই অর্থবিল-২০১৯ পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থবিলটি প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
গত ১৩ জুন আগামী অর্থ বছরের জন্য এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে এ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
কয়েকটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কর প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে সংসদে পাস হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য অর্থবিল। গতকাল শনিবার অর্থ বিলটি উপস্থাপনের পর ১০ জন সদস্য বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব আনেন। তারা হলেন−ফখরুল ইমাম (ময়মনসিংহ-৮), পীর ফজলুর রহমান (সুনামগঞ্জ-৪), কাজী ফিরোজ রশিদ (ঢাকা-৬), বেগম রওশন আরা মান্নান (মহিলা আসন-৪৭), রুস্তম আলী ফরাজী (পিরোজপুর-৩), হারুনুর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), লিয়াকত হোসেন খোকা (নারায়ণগঞ্জ-৩), মোকাব্বির খান (সিলেট-২), বেগম রুমিন ফারহানা (মহিলা আসন-৫০) ও মোহাম্মদ শামীম হায়দার চৌধুরী (গাইবান্ধা-১)। তাদের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে অর্থবিল ২০১৯ সংসদে পাসের জন্য অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপন করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এটি ভোটে দেন এবং কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেটের ওপর সর্বশেষ আলোচনা করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অর্থবিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুমতি দিতে স্পিকারের কাছে আবেদন করেন। স্পিকার তার আবেদন মঞ্জুর এবং প্রধানমন্ত্রীকে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বিল উপস্থাপনের অনুমতি দেন।
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পরেও বড় ধরনের কোনও সংশোধন ছাড়া অর্থবিল ২০১৯ সংসদে পাস হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ওপর ১০ শতাংশ কর বহাল রাখা হয়েছিল। এটিকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক দাবির পরও তা আমলে নেয়নি সরকার। সঞ্চয়পত্রের ওপর ১০ শতাংশ কর বহাল রাখা হয়েছে। সুতা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ৪ টাকা হারে করারোপের বিধান রাখা হয়েছে। অর্থবিল ২০১৯-এ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে শেয়ার বাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। শেয়ারবাজারের রিটেইল আর্নিংয়ের ক্ষেত্রে নিট মুনাফার ৭০ শতাংশ স্থানান্তর করলে ১০ শতাংশ হারে কর পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে।
শনিবার সকালে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অর্থমন্ত্রী উপস্থিত না থাকলেও দুপুরের বিরতির পর বেলা ৩টায় তিনি অধিবেশনে যোগ দেন। পরে তিনি বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা উপস্থাপন করেন। এ সময় বাজেট বক্তৃতায় তার অসুস্থতার বিষয়টি সংসদকে অবহিত করেন।
এক নজরে প্রস্তাবিত বাজেটের পরিবর্তন :
স্টক লভ্যাংশের সমান নগদ লভ্যাংশ :
প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহিত করতে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। অর্থবিলে সেই প্রস্তাব সংশোধন করে স্টক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে সমান হারে নগদ লভ্যাংশও দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশে উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।
অবণ্টিত মুনাফায় কর ১০ শতাংশ :
প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অবণ্টিত মুনাফার উপর কর আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কোনো আয় বছরে কোনো কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে বাড়তি অংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই প্রস্তাবের আংশিক সংশোধন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছরে রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।
ভ্যাটের হারে পরিবর্তন :
ভ্যাটের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছিল। সে দাবির পরিপেক্ষিতে হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে, অর্থবিলে সেই বিধান আনা হয়েছে।
প্রতি কেজি সুতায় ৪ টাকা কর :
বাজেট প্রস্তাবে তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত সুতা শিল্পের উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত সুতা শিল্পের উপর ৫ শতাংশ ভাটের পরিবর্তে প্রতি কেজি সুতায় ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট কর ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমএস/