সুস্থ থাকতে চান? কৌশল জেনে নিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:০৪ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৫:২৯ পিএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার
জীবনটা অনেক লম্বা। এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে দরকার হবে সুস্থ দেহ। আর এই দেহ অসুস্থ থাকলে ধুঁকে ধুঁকে জীবন শেষ করতে হবে। এজন্যই স্বাস্থ্যকে সকল সুখের মূল বলা হয়েছে। সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য আপনি কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যা আপনার খরচ না বাড়িয়ে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
সুস্থ ও সতেজের জন্য দেহের ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে। সঙ্গে সঙ্গে শরীরে শক্তি থাকবে বেশি কিন্তু ক্লান্তি থাকবে কম। শরীর ও মন থাকবে উৎফুল্ল। এমন কৌশল কে না চায়? এবার দেখে নিন পুষ্টিবিদদের এ সংক্রান্ত পরামর্শ:
ভোরে ঘুম থেকে উঠুন
সকালের বাতাস এবং ভোরের সূর্যের আলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এই সময়ে হাঁটাচলা বা ব্যায়াম সেরে নিতে পারছেন আপনি। বিশ্রামের সঙ্গে পত্রিকাও দেখে নিতে পারছেন । সকালের নাস্তাটা হচ্ছে পারফেক্ট সময়ে। দিনের কর্মসূচি ঠিক করে বেরিয়ে পড়তে পারছেন। ফলে আপনার কাজের গতি বেড়ে যাবে।
প্রতিদিন খাবারে ভিন্নতা রাখবেন
প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয়। একেক দিন একেক রকমের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন৷ এতে করে খাবারের রুচি বাড়বে এবং আপনার শরীর সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাবে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শর্করা (৬০ ভাগ), আমিষ (২০ ভাগ) এবং তেল জাতীয় (২০ ভাগ) খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। খাবারের তালিকায় বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি যুক্ত খাবার রাখুন৷
আঁশযুক্ত খাবার খাবেন
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার রাখুন খাবারের তালিকায়৷ শাক সবজি, তাজা ফল, বিভিন্ন শষ্যদানা যেমনঃ গম, ভুট্টা, বাদাম, ছোলা ইত্যাদিতে প্রচুর আঁশ থাকে ৷ এসব খাবার খেলে ঝটপট পেট ভরে এবং পেট পরিষ্কারও থাকে, অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷ দেশে যখন যে ফল পাওয়া যায় সেই ফলই খাবেন৷ এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
নিয়মিত ব্যায়াম করবেন
নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অনেকগুলো ভয়াবহ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। এর সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতা এবং এনার্জি লেভেলও অনেক বৃদ্ধি পাবে। হাঁটাহাটি বা ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে৷ প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটুন৷ এতে হাত-পা চলাচলের পাশাপাশি মুক্ত বাতাসও সেবন হবে, যা সুস্থ থাকতে বিশাল ভূমিকা পালন করে৷
যে খাবারগুলো খাওয়া জরুরি
প্রতিদিন খাবারের তালিকার সুষম খাদ্য দুধ রাখা উচিত৷ কারণ এতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ৷ সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন মাছ-মাংস বা ডিম খাওয়ার চেষ্টা করবেন৷ আর দুই একদিন সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। কারণ সামুদ্রিক মাছে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারী ওমেগা থ্রি তেল। রান্নায় উপকারি মশলা যেমন, রসুন, পেঁয়াজ, দারুচিনি, হলুদ, আদা ব্যবহার করুন।
এসব মসলায় অসংখ্য ঔষধি গুণ রয়েছে। প্রতিদিন বাদাম খাবেন, এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ফাইবার, তেল এবং আমিষের অভাব পূরণ হবে৷ প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করবেন৷ আর আয়োডিনযুক্ত লবণ খাবেন। সব সময় খাবার ধীরে-সুস্থে চিবিয়ে খাবেন। কী খাচ্ছেন, কেন খাচ্ছেন তা বুঝে শুনে খাবেন এতে করে খাবারের প্রতি সচেতনতা বাড়বে।
যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন
ফাস্টফুড বা প্রক্রিয়াজাত করা খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়৷ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি, লবণ এবং কেমিক্যাল থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ফাস্টফুড আরও ক্ষতিকর। তাই ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে৷ প্রাণিজ তেল বা চর্বি কম খাবেন, এর পরিবর্তে উদ্ভিজ তেল খাবেন।
তাজা ফল এবং শাক-সবজি খাবেন
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় যে ঋতুতে ফলমূল এবং শাক সবজি পাওয়া যায় সেগুলো অবশ্যই রাখবেন। আঁশযুক্ত সবজি ও যথেষ্ট টক জাতীয় ফল থাকা প্রয়োজন৷ কারণ এসব খাবার শরীরে চিনি নিয়ন্ত্রণে যেমন সাহায্য করে, তেমনি হৃদরোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে৷ বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার মতে দিনে কয়েকবার শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত৷ যারা ফলমূল এবং শাক-সবজি বেশি খান তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় ৷
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
প্রতিদিন শরীর, দাঁত, ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত রাখবেন। অসুস্থতা এবং রোগ সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো হাত ধোয়া। বিশেষভাবে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে যেমন- খাবার প্রস্তুতের আগে, খাবার খাবার আগে-পরে, হাঁচি-নাক ঝাড়ার পরে, টয়লেট ব্যবহার করে পরে, বাচ্চাদের ডায়াপার বদলানোর পরে, ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগানোর পরে এবং আবর্জনা পরিষ্কার করার পরে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন
বিশুদ্ধ পানি যেমন পান করেন তেমনি খাবার, বাসনপত্র ধোয়া এবং রান্না করার পানি হতে হবে বিশুদ্ধ। সাপ্লাইর পানি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই এই পানি ব্যবহার করার আগে ফুটিয়ে নিন অথবা উপযুক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে পরিশোধন করে নিন।
শারীরিক পরিশ্রম করুন
আপনার বয়স যাই হোক না কেন, সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম করা প্রয়োজন। শারীরিক পরিশ্রম করলে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শারীরিক পরিশ্রম ওজন ঠিক রাখতে, হাড় মজবুত করতে এবং শক্তিশালী পেশি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এ ছাড়া জটিল রোগ এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে শারীরিক পরিশ্রম।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হরমোনের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখে, যা বিপাকক্রিয়ায় ও ওজনের উপর প্রভাব ফেলে। হার্ট ভালো রাখে। ঠিক মত না ঘুমালে স্থূলতা, বিষণ্ণতা, হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং বিভিন্ন দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভাল ঘুমের জন্য প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। আপনার বেডরুমের পরিবেশ যেন নিরিবিলি, অন্ধকার ও আরামদায়ক থাকে লক্ষ্য রাখবেন। বিছানায় শুয়ে টেলিভিশন কিংবা মোবাইল চ্যাটিংয়ের অভ্যাস করবেন না।
সুস্থ থাকার গুরুত্ব যে কতখানি, তা কেবল অসুস্থ হলেই টের পাওয়া যায়। শরীর সুস্থ না থাকলে মনও ভালো থাকবে না। এর জন্য চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। উপরোক্ত কৌশলগুলো অবলম্বন করলেই আপনি সুস্থ ও হাসি খুশি থাকতে পারবেন ।