ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

নয়ন বন্ডের আরও কিছু অজানা তথ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩২ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:২৩ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

আলোচিত বরগুনার শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নয়ন সম্পর্কে বেরিয়ে আসে অজানা অনেক তথ্য।

আজ মঙ্গলবার নয়ন র‌্যাবের হাতে নিহত হলে, নতুন করে বেরিয়ে আসে আরও কিছু অজানা তথ্য।  

জানা যায়, অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বরগুনা পৌর শহরের বিকেবি রোডের শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকির ছেলে।

পৌর শহরের বিকেবি রোডের শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগে মাদক সেবনের টাকা যোগাড় করার জন্য ছিঁচকে চুরি আর মোবাইল ছিনতাই করত নয়ন।

ছিঁচকে চোর থেকে এক সময় সে হয়ে ওঠেন পেশাদার সন্ত্রাসী। একপর্যায়ে শুরু করে হেরোইনের ব্যবসা। নিজ বাসায় মাদক সেবনের আখড়া বসায়। চুরি আর ছিনতাই ছাড়াও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নিজ বাসায় মাদকসেবীদের মাদক সেবনের সুযোগও করে দিত নয়ন। মাদক সেবনের জন্য সেখানে যাওয়া-আসা করতেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা।

মাদক ব্যবসার পরিধি বাড়াতে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে নয়ন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার।

দুই বছর আগে বরগুনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম নান্নাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে এই নয়ন। এ ঘটনায় নান্না জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের কাছে বিচার দেন। তবে এ ঘটনায় তিনি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ ছিল।

এরপর বাকিতে মালামাল বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় বিকেবি রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নয়া মিয়ার পা ভেঙে দিয়ে সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচনায় আসে নয়ন।

এর কিছুদিন পর নয়নকে তার বাসা থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের হেরোইন এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এই মামলায় কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে নয়ন। এভাবেই বরগুনার ছিঁচকে চোর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম ওঠে নয়নের।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে বিয়ের আগে ও পরে উত্যক্ত করত। হুমকি দিত। ফোনে কথা না বললে জীবননাশের হুমকি দিত বলে জানান মিন্নি।

বিয়ের আগে নয়নের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না বলে দাবি করে মিন্নি জানান, উত্যক্তের কথা স্বামীকে জানালে বেশ কয়েকবার নয়নের সঙ্গে রিফাতের বাক বিতণ্ডা হয়েছিল। এরপর থেকে ক্ষিপ্ত ছিল নয়ন। 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ জুন দিনে-দুপুরে রিফাতের উপর হামলা চালায় নয়ন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা।

হামলা চলাকালে কেউ একজন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যান নয়ন ও তার সহযোগীরা।

পরে নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম শরীফ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন ও তার সহযোগীরা রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি।

তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তবে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে মূলহোতা নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ অন্যারা।

মঙ্গলবার ভোরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নয়ন নিহতের খবর প্রকাশিত হলে স্থানীয় ও দেশজুড়ে স্বস্তির বার্তা বইতে থাকে।  

নয়নের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার এলাকাবাসী নয়নের নিহতের খবর শুনে স্বস্তি প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করে।

স্বামী হত্যার বিচার চাওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার ঘটনা শোনার পর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।

নিহতের বিষয়ে গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেন, ঠিক এমন একটা খবরের অপেক্ষায় ছিলাম। হৃদয়ে শান্তি এসেছে। মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে, বিচারের জন্য আদালতে দৌড়াতে হলো না। এর পর মিন্নি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

ওরা ধরা পড়বে কি পড়বে না তা নিয়ে খুব আশংকায় ছিলাম। সুবিচার পাওয়া নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছিল মনে। নয়নের নিহতের মধ্য দিয়ে সব শঙ্কা এবং আতঙ্ক দূর হয়েছে। রিফাতের আত্মা শান্তি পেয়েছে।

মূল আসামি নয়ন নিহতের খবরে খুব খুশি হয়েছেন জানিয়ে মিন্নি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও আবেদন জানান, নয়ন নিহতের ঘটনায় আমি অনেক খুশি হয়েছি। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের আমি শাস্তি চাই। তারাও যেন কঠোর শাস্তি পায় এই প্রার্থনা করি।

আই/