টাওয়ার জটিলতায় ভোগান্তি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:১০ পিএম, ২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
মানসম্পন্ন টেলিসেবা দিতে গত বছরের নভেম্বরে চার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয় সরকার। কিন্তু সেলফোন অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি জটিলতায় এখনো সেবাদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি তিন টাওয়ার কোম্পানি।
ফলে, নতুন টাওয়ার স্থাপন ও সম্প্রসারণ না হওয়ায় মানসম্মত টেলিসেবা পেতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে অপারেটরদের।
টাওয়ার শেয়ারিং সেবা দিতে চলতি বছরের ২ এপ্রিল টাওয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সেলফোন অপারেটরদের ৪ এপ্রিলের মধ্যে সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্টসহ (এসএলএ) পূর্ণাঙ্গ চুক্তি জমা দিতে হবে। জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করেছে বিটিআরসি।
অপারেটরদের দাবি, নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে ৮ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রয়োজন হলেও খসড়া চুক্তিতে তা ৪ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা টাওয়ার স্থাপনের যে ন্যূনতম সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেলফোন অপারেটরদের প্রয়োজনের সঙ্গে তা অসংগতিপূর্ণ।
এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের এক্সটারনাল কমিউনিকেশন বিভাগের ডিজিএম মুহাম্মদ হাসান বলেন, সেবার মান বিষয়ে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যে খসড়া চুক্তি করা হয়েছে, তাতে তাদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এর ফলে গ্রাহকদের চাওয়া অনুযায়ী মানসম্পন্ন সেবা দেয়া অনেকটা অসম্ভব।
এছাড়া অনুমোদিত ট্যারিফের আওতায় টাওয়ার কোম্পানিগুলোর সেবা দেয়ার কথা থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রস্তাব অনুযায়ী যেসব ক্ষেত্রে ট্যারিফ নির্ধারিত থাকবে না, সেসব ক্ষেত্রে সেলফোন অপারেটর সংশ্লিষ্ট ব্যয় বহন করবে।
প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়ায় সুলভে উন্নত সেবা দেয়ার বিষয়ে টাওয়ার কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা কিংবা বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। এক্ষেত্রে সেলফোন অপারেটর ও টাওয়ার কোম্পানির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে আমরা আগ্রহী, যা হবে দেশের টেলিযোগাযোগ আইন ও টাওয়ার কোম্পানি নীতিমালার আলোকে।
সেলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, টাওয়ার কোম্পানিগুলোর অসহযোগিতার কারণে লিজ চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ অবস্থায় টাওয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে সেবাটি গ্রহণ করতে পারে সেলফোন অপারেটররা। সেক্ষেত্রে সব ধরনের চুক্তির অনুলিপি নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দেবে অপারেটররা।
তবে অপারেটরদের দাবি অযৌক্তিক দাবি করে টাওয়ার কোম্পানিগুলো বলছে, ইডটকো আগে থেকেই টাওয়ার সেবা দিচ্ছে। তাদের এসএলএটিকে মানদণ্ড ধরে নিয়ে সেবাটি দিতে চায় টাওয়ার কোম্পানি। বিটিআরসির মধ্যস্থতায় একটি এসএলএ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটি মানছে না অপারেটররা।
টাওয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়ার বিধান রেখে গত বছরের এপ্রিলে টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা প্রকাশ করে বিটিআরসি।
একই সঙ্গে এ নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স দিতে দরপত্র বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে টাওয়ার শেয়ারিং সেবা দিতে লাইসেন্সের আবেদন করে আট প্রতিষ্ঠান। মূল্যায়ন শেষে চার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করে বিটিআরসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টিতে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়।
গত বছরের নভেম্বরে চার প্রতিষ্ঠানের কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইডটকো বাংলাদেশ কো. লিমিটেড, টিএএসসি সামিট টাওয়ারস লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ ও এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড।
দেশে টাওয়ারের সংখ্যা বর্তমানে ৩৪ হাজারের বেশি। প্রযুক্তিভেদে টাওয়ারগুলোতে বিটিএস, নোডবি ও ই-নোডবি স্থাপন করেছে অপারেটররা। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর সংখ্যাও বাড়ছে।
লাইসেন্সিং নীতিমালা অনুযায়ী, টাওয়ার কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ৭০ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়। এ লাইসেন্সের মেয়াদ হবে ১৫ বছর। লাইসেন্স পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে নীতিমালায়।
ব্যায়ের আধিক্যের পাশাপাশি জনবল সংশ্লিষ্টতা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকটসহ পরিবেশ ঠিক রাখতে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক অপারেটর কোম্পানি বিভিন্ন দেশ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে।
জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, চুক্তির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। অপারেটররা যা বিনিয়োগ করছেন তার বড় একটা অংশ টাওয়ারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ফলে টাওয়ারে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তাদের সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধাই হবে বলে জানান মন্ত্রী।
আই/এসি