ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে পাত্রখোলায় অন্তিম সম্প্রীতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০১ পিএম, ৫ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলা চা বাগান। ১৮৭৫ সাল থেকে এখানে একসঙ্গে সমায়িত করা হয় তিন ধর্মের অনুসারীদের।

পাত্রখোলা বধ্যভূমির কাছে এ চৌহদ্দিতে প্রায় ৫ একর জমি। এই ভূমির প্রথমাংশে মুসলিমদের কবরস্থান, এরপর খ্রিষ্টানদের সমাধি আর শেষাংশে রয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্মশান।

এলাকাবাসী জানান, পাত্রখোলা, শ্রী গবিন্দপুর ও মদনমোহনপুর এই তিন বাগানে অন্তোত ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছে।

ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ তারা। তবে সম্প্রীতির কমতি নেই। সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন সব ধর্মের মানুষ।

পুরহিত রাজেশ শর্মা জানান, একসঙ্গে তিনটি সমাধিস্থল হলেও কখনো কোন বিভেদ হয়নি। একে অপরকে সহযোগীতা করে আসছে এখানকার মানুষ।

চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তাদের পূর্বপুরুষরা এভাবে সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন, তারাও তাই করছেন বলে জানান এ পুরহিত।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পাত্রখোলার এই সম্প্রীতির নজির সারা দেশের মানুষকেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ জানান, পাত্রখোলা বাগানে পাঁচ হাজার মুসলমান, আট হাজার হিন্দু আর আড়াই হাজার খ্রিস্টানের বসবাস। বাকিরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।

“দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি, আমাদের মধ্যে কোনো হিংসা বিদ্ধেষ নেই। ভাই ভাই হিসেবে আমরা বসবাস করছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে জঙ্গিবাদ, মন্দির-গির্জায় হামলা, এটা ইসলাম কখনোই সমর্থন করেনা। যারা এ ধরনের কাজ করে, ইসলামে তাদের স্থান নাই।

কোরআনে বলা হয়েছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি চলবে না। “আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি। আগামীতেও কিছু হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি”।

কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুর রহমান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। তারই প্রমাণ পাবেন আজ যদি কেউ কমলগঞ্জে আসেন। দেখবেন, একই জায়গার মধ্যে পাশাপাশি কবরস্থান, সমাধিস্থান আর শ্মশানঘাট। এটাই প্রমাণ করে, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।

সরকারের নিকট সামাজিক সম্প্রীতির জন্যে অনুকরণীয় এই স্থানটি গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দাবি জানান এলাকাবাসী।

আই/