ওয়াকার-ব্রেট লী’র থেকেও উপরে মোস্তাফিজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩২ পিএম, ৬ জুলাই ২০১৯ শনিবার
ক্যারিয়ারের শুরুতে একপ্রকার দুর্বোধ্যই ছিলেন। বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা তার বলে রীতিমত খাবি খেতেন। তার সর্পিল সুইং, স্লোয়ার, কাটারে রীতিমতো পড়িমরি অবস্থা হতো তাদের। এক কথায়, ব্যাটসম্যানদের জন্য ত্রাসে পরিণত হওয়া এই বোলার আবারো ফিরেছেন স্বরূপে। ছুঁয়েছেন দ্রুততম একশ উইকেটের মাইলফলক। টপকে গেছেন সাবেক গ্রেট পেসার ওয়াকার ইউনিস ও ব্রেট লী’কে।
হ্যাঁ পাঠক, ঠিক ধরেছেন। বলছিলাম টাইগার ‘কাটার মাষ্টার’ দ্য ফিজ খ্যাত মোস্তাফিজুর রহমানের কথা। অভিষেকের পর থেকে দুর্দান্ত খেলছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। তবে ইনজুরিতে পড়ে মোস্তাফিজের সেই ধারটা কমে যায়।
কিন্তু বেশকিছুদিনের ব্যবধানে ফের স্বরূপে ফিরেছেন তিনি। বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দ দেখিয়েছেন ফিজ। তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য তাকে বাংলাদেশের সম্পদও বলছেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
শুক্রবার ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে একপর্যায়ে ২ উইকেটে ২৪৩ রান তুলে ফেলে সরফরাজ ব্রিগেড। তখনো ৮ ওভারের মতো বাকি ছিল। ফলে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ৩৩০-৩৪০ রান। কিন্তু তাতে বাদ সাধেন মোস্তাফিজ। ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ৩১৫ রানে তাদের বেঁধে রাখেন তিনি।
এর আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও ৫ উইকেট শিকার করেন কাটার মাস্টার। সব মিলিয়ে ২০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন তিনি। বাংলাদেশি বোলারদের জন্য যা এক অনন্য অর্জন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মাশরাফি বলেন, দুর্দান্তভাবে ক্যারিয়ার শুরু করে মোস্তাফিজ। সূচনালগ্নে তার বল খেলা ছিল দূরহ। ইনজুরিতে ফিরলে খানিকটা ছন্দ হারায় সে। তবে আয়ারল্যান্ড সফর থেকে ফের রূদ্রমূর্তির রূপে দেখা যাচ্ছে তাকে। আশা করি, ভবিষ্যতে ইনজুরি তাকে আর গ্রাস করবে না। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সত্যিকারের সম্পদ ও।
এদিকে, এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়ার মধ্যদিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে উইকেট শিকারের সংখ্যায় একশ ছাড়িয়েছেন মোস্তাফিজ। বর্তমানে তার ওয়ানডে উইকেট সংখ্যা ১০৩। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তিনি ম্যাচ খেলেছেন ৫৪টি। যা তাঁকে দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকারির তালিকার পঞ্চম স্থানে জায়গা করে দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৫৩ ইনিংসে বল করা ফিজের সেরা বোলিং ফিগার ৪৩ রানে ৬ উইকেট, ভারতের বিপক্ষে। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন পাঁচবার। আর চার উইকেট শিকার করেছেন তিনবার। ২২.৬৫ গড়ে ১০৩ উইকেট শিকারি মোস্তাফিজ ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৫.১৭ করে।
আইসিসি`র ইতিহাসে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকারির এ তালিকার শীর্ষে আছেন আফগানিস্তানের তারকা স্পিনার রশিদ খান। মাত্র ৪৪ ম্যাচ খেলে এই রেকর্ড গড়েন তিনি। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ হারারে`তে উইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে একটি উইকেট নিয়েই একশ উইকেট ছোঁয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
তার পরেই আছেন অজি বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে দ্রুততম একশ উইকেট দখলের কৃতিত্ব অর্জন করেন স্টার্ক। এ জন্য তাঁকে খেলতে হয়েছে ৫২টি ম্যাচ।
তালিকার তৃতীয় স্থানে আছেন পাকিস্তানের জীবন্ত কিংবদন্তী লেগ স্পিনার সাকলাইন মোস্তাক। ১৯৯৭ সালের ১২ মে ভারতের গোয়ালিয়রে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে একশ উইকেট ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। তবে এজন্য তাঁকে খেলতে হয়েছে ৫৩টি ম্যাচ।
আর তালিকার চার নম্বরে আছেন কিউই গতিতারকা শেন বন্ড। ২০০৭ সালের ২৩ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডিলেডে ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচে দুই উইকেট নিয়ে এই কৃতিত্ব দেখান। তবে এজন্য তাকে ম্যাচ খেলতে হয়েছে ঠিক কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের সমান। অর্থাৎ ৫৪টি।
ওয়ানডেতে দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকারের এই তালিকার সেরা দশে জায়গা করে নেয়াদের মধ্যে আছেন যথাক্রমে ব্রেট লী (৫৫ ম্যাচ), ট্রেন্ট বোল্ট (৫৬ ম্যাচ), মোহাম্মদ শামি (৫৬ ম্যাচ), ইমরান তাহির (৫৮ ম্যাচ) এবং ওয়াকার ইউনিস (৫৮)।
এনএস/