বরিশালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত চিকিৎসার টাকা ফেরত যাচ্ছে!
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:০৭ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৯ রবিবার
বরিশালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যেতে বসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, ফ্রি চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট করার লক্ষ্যেই বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। নতুবা এটি নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের অবহেলা।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, এমনিতেই বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাই এই অর্থ ফেরত না নিয়ে বরং তা আগামী অর্থ বছরের সঙ্গে যোগ করে দেয়া হোক।
এ দিকে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিপত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করতে না পারায় বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করা সম্ভব হয়নি। কেন কমিটি গঠন করা যায়নি এমন প্রশ্নে শেবাচিম কর্তৃপক্ষ, বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং বিভাগীয় কমিশনার দোষ চাপাচ্ছেন একে অন্যের উপর।
শেবাচিম সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলার ন্যায় বরিশালেও মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরিপত্র অনুযায়ী, চিকিৎসা সেবার মান ও ব্যয় যাচাই এর জন্য অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, মেডিকেল কলেজ হাসপতালের পরিচালক এবং উপপরিচালক, সিটি করপোরেশন বা মেয়রের প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল এর চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা বাঞ্চনীয়। যাতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সভাপতি পদে এবং মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু বছর শেষ হয়ে গেলেও অদ্যবদি কমিটি গঠন করতে পারেনি শেবাচিম কর্তৃপক্ষ। ফলে বাজেট থাকা সত্ত্বেও কোনও মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়নি শেবাচিম।
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ৯ নম্বর সেক্টর (গেরিলা) বলেন, কমিটি না করার অজুহাতে এই অর্থ খরচ করা হয়নি। কিন্তু শেবাচিম কর্তৃপক্ষ চাইলে এই অর্থ খরচ করতে পারতেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধারা শেবাচিমে চিকিৎসা নিচ্ছেন কিন্তু তা বিনামূল্যে নয়। কেবিন ভাড়া ওষধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সবই টাকা দিয়ে করাতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ৫ লাখ টাকা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারা বলেন, শুনেছি পরিপত্র অনুযায়ী আমাদের সব চিকিৎসা ফ্রি। এমনকি বাসা থেকে নিয়ে আসতে হলেও তার ব্যবস্থাও করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোথায়। এ ধরনের কোনও সুযোগ সুবিধা তো আমাদের দেয়া হয় না।
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে অনেক কিছু করার চেষ্টা করছেন। আমাদের এক পা কবরে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। এটা ভেবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে বরাদ্দ করেছেন তা নিয়ে গড়িমসি করার মানে কি। তিনি প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেন, এই অর্থ ফেরত না নিয়ে বরং আগামী অর্থ বছরের সঙ্গে যোগ করে দেয়া হক। এবং মুক্তিযোদ্ধাদের এই অর্থ নিয়ে অবহেলা করায় শেবাচিম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শেবাচিম, পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন ও উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে তারা দোষ চাপায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) উপর। তারা বলেন, এই টাকা খরচ করতে হলে পরিপত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করে খরচ করতে হবে। কিন্তু বরিশাল সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও তারা কোনও প্রতিনিধি পাঠাননি। যে কারণে টাকা খরচ করলে অডিট আপত্তি হতে পারে ভেবে ভয়ে টাকা খরচ করিনি। বিসিসিকে চিঠি দিয়েছেন যে তার প্রমাণ কি এমন প্রশ্নে কোনও অনুলিপি দেখাতে পারেনি শেবাচিম কর্তৃপক্ষ।
পরে এ বিষয়ে কথা হয় বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের একজনের জন্য এটা থেমে থাকার কথা না। ৫ সদস্যের একজন না থাকলে টাকা ফেরত যাওয়ার কথা? পরে তিনি প্রতিবেদকের কাছ থেকে পরিপত্রটি রেখে দিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল, মো. জাকারিয়া বলেন, শেবাচিম কর্তৃপক্ষ হয়ত বিষয়টি বুঝতে ভুল করেছে। এখানে স্পষ্ট লেখা আছে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে শেবাচিম পরিচালকেরই এই অর্থ খরচ করার কথা! তিনিও বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি টাকাও খরচ করেনি এটি কোন কথা! কমিটির অজুহাতে যদি খরচ না করে থাকে তবে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট করার কথা বলেন মন্ত্রী।