আর্জেন্টিনা বনাম চিলি: ফুটবল ম্যাচ নাকি রেসলিং!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৭ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৯:০৫ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৯ রবিবার
কোপা আমেরিকায় নির্মম বাস্তবতার শিকার গত দুই আসরের ফাইনালিস্ট আর্জেন্টিনা ও চিলি। শনিবার রাতে তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয় দল দুটি। ঘটন-অঘটনের মহারণে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জিতেছে ২-১ গোলে। স্কালোনির দল হয়েছে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা। তবে এই স্থানটা অর্জনের জন্য দুই দল যা করেছে তা ছিল কল্পনারও বাইরে।
ম্যাচের ফল নয়, ফুটবলপ্রেমীদের মনে রাখার মতো অনেক উপদানই ছিলো ম্যাচটায়। আর্জেন্টিনা ও চিলি দুই দলই ম্যাচটা শেষ করেছে দশ জনের দল নিয়ে। যা ছাপিয়ে গেছে ম্যাচের ফলাফল। এদিন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার লাল কার্ড দেখেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ৩৭ মিনিটে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঠ ছাড়তে হলো চিলির অধিনায়ক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গ্যারি মেডেলকেও।
এমনিতেই ফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া। স্বাভাবিকভাবেই হতাশা ও ক্ষোভ ছিল দুই দলের মধ্যে। কোপা আমেরিকার তৃতীয় সেরা দল হওয়ার জন্য মরিয়া ছিল দুই দলই। আর্জেন্টিনা একটু বেশিই। গত দুটো ফাইনাল যে চিলির কাছেই হেরেছে তারা! ম্যাচের ২২ মিনিটে সার্জিও অ্যাগুয়েরো ও পাওলো দিবালার সুবাদে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা বড় জয়ের আশাতেই ছিল। তাই চিলির রক্ষণের ওপর হিংস্র বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন মেসিরা।
সেই ধারাবাহিকতায় ৩৬ মিনিটে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু তাকে কোনো সুযোগই দেননি মেডেল। বল চলে যায় মাঠের বাইরে। ক্ষোভে মেডেলকে পেছন থেকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বসেন মেসি। ক্ষেপে গিয়ে মেসিকে বুক দিয়ে কয়েকবার ধাক্কা দিয়েছেন মেডেল। আর্জেন্টিনা অধিনায়কও কম যাননি, বুক চিতিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন দুহাত উচু করেই। গড়েছেন প্রতিরোধ। পরিণামটা খারাপ হয়েছে দুজনের জন্যই।
স্বাভাবিকভাবেই সরাসরি মেডেলকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। কিছুক্ষণের মধ্যে মেসিকেও মাঠ থেকে বের করে দেন তিনি। অথচ ভুক্তভোগী মেসিকে লাল কার্ড না দিলেও পারতেন রেফারি। ওই ঘটনার রেশ থাকল পুরো ম্যাচে। আগা-গোড়া ফাউল, হাতাহাতি আর ধাক্কাধাক্কিতেই ভরপুর থাকল ম্যাচ। মারপিটের কারণে একটা সময় ম্যাচ বন্ধও রাখতে হলো।
পরে ৫৯তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে জাল কাঁপিয়ে আর্জেন্টিনাকে একটি গোল ফিরিয়ে দেন চিলির মিডফিল্ডার আর্তুরো ভিদাল। কিন্তু ম্যাচের রোমাঞ্চ ছাপিয়ে উঁকি দিচ্ছিল উৎকণ্ঠা। কখন যে কী হয়ে যায়! শেষ পর্যন্ত বাজে আতঙ্ক ছড়ানো ম্যাচটার চূড়ান্ত বাঁশি। শেষ বাঁশি বাজতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন গ্যালারির সমর্থকরা, ম্যাচ অফিসিয়ালস, রেফারি তথা কোটি কোটি দর্শক!
ম্যাচে হারলেও বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল চিলি। এদিন ৬১ শতাংশ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়নরা। বাকি সবদিক থেকেই আর্জেন্টিনার চেয়ে পিছিয়ে থাকল তারা। মেসির লাল কার্ডের পর রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে ওঠা আর্জেন্টিনা ম্যাচে ফাউল করেছে ২১টি। চিলি ১৮টি।
তাইতো এ রাতে সাও পাওলো স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ হয়েছে, নাকি রেসলিং হয়েছে- তা নিয়ে দর্শক-সমর্থকদের বিভ্রান্তি হতেই পারে!
এনএস/এসি