৬৮ বছরের রেকর্ড ভাঙলো মোংলা বন্দর
মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:৫২ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে মোংলা বন্দর ১৩৫ কোটি টাকা মুনাফা আয় করেছে। যা বন্দর সৃষ্টির ৬৮ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে জানা গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাব বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সোমবার (৯ জুলাই) মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ১৯৫০ সালে এ বন্দর সৃষ্টির পর এবারই সবচেয়ে বেশি মুনাফা (লাভ) করেছে।
বন্দরে আগত জাহাজের আগমন, পণ্য বোঝাই-খালাসসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাত থেকে এ রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা আয় করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে মোংলা বন্দর সৃষ্টির পর ৮০ দশকের শেষ দিক পর্যন্ত বন্দরটি মোটামুটিভাবে ভাল চলে আসছিল।
কিন্তু ৯০ দশকের পর থেকে বন্দরটির দশা ক্রমেই রুগ্ন হয়ে পড়ে। দিনের পর দিন জাহাজ না আসায় ক্রমান্বয়ে লোকসানে পড়ে এটি অনেকটা ‘মৃত প্রায়’ বন্দরে পরিণত হতে থাকে।
বছরের পর বছর ধরে চলার এক পর্যায়ে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দরটিকে রুগ্ন অবস্থা থেকে উত্তোরণে নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বন্দরে বিরাজমান নানা সমস্যা ও সংকট দূর করে এটিকে আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
যার প্রেক্ষিতে ‘মৃত প্রায়’ বন্দরটি ধীরে ধীরে আধুনিক বন্দর হিসেবে লাভের মুখ দেখে। যে ব্যবসায়ীরা এক সময়ে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সময়ের ব্যবধানে সে ব্যবসায়ীরা আবার এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
এতে করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাজ আগমন ও মালামাল ওঠানামার পরিমাণ দিনকে দিন বেড়ে চলেছে।
এক সময়ের ‘মৃতপ্রায়’ মোংলা বন্দর ক্রমেই কর্ম চঞ্চল ও লাভজনক হয়ে উঠছে। এর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামার পরিমাণ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং, আধুনিক নৌযান, ইকুপমেন্ট (যন্ত্র) সংযোজন ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এতে করে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অন্যদিকে রাজস্ব বেড়ে চলেছে। সব মিলিয়ে কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠেছে মোংলা বন্দর।
বন্দরের অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এ বন্দরে জাহাজ এসেছে ৭৮৪টি আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৯১০টি।
এক বছরের ব্যবধানে এখানে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৬টি। একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ মেট্রিক টন আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পণ্য ওঠানামা করেছে এক কোটি ২ লাখ মেট্রিক টন।
সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে এ বন্দরে পণ্য ওঠানামার ব্যবধান বেড়েছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া গত এক অর্থ বছরের ব্যবধানে এ বন্দরে কন্টেইনার ওঠানামার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ হাজার ১১টি।
অপরদিকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মোংলা বন্দরে আয় হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা। এতে এক বছরে এ বন্দর ৩৯ কোটি টাকা বেশী আয় করেছে।
অন্যদিকে এ বন্দর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এ বন্দর সব আয় ব্যয় হিসাব নিকাশ শেষে নিট মুনাফা লাভ করেছে ১১০ কোটি টাকা আর সদ্য শেষ হওয়া অর্থ বছরে নিট মুনাফা আয় করেছে ১৩৫ কোটি টাকা। এতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া অর্থ বছরে (২০১৮-১৯) এ বন্দর ২৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা আয় করেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান জানান, বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানে নানা প্রকল্প দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন হওয়ায় বন্দরের সক্ষমতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যে পশুর নদীতে ড্রেজিং এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করায় অনায়াসে বড় বড় জাহাজ বন্দর চ্যানেলে প্রবেশ করতে পারছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন আধুনিক নৌযান বন্দরে সংযোজন করা হয়েছে। অপরদিকে ইতিমধ্যে বন্দর জেটিতে ৪শ’ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল হারবার ক্রেনসহ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর জন্য বিভিন্ন আধুনিক ইকুপমেন্ট সংযোজন করা হয়েছে এবং আরো আধুনিক ইকুপমেন্ট সংযোজন প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামাসহ ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ।
চেয়ারম্যান আরও জানান, ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ার কারণে মোংলা বন্দর গতিশীল হয়ে ওঠছে। এতে করে জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামার পাশাপাশি বন্দরের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে ৭৫টি হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজনসহ বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এগুলো যোগ হলে বন্দরের গতি আরও বাড়বে।
এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও খুলনা চেম্বারের সদস্য আলহাজ্ব এইচ এম দুলাল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহার করে এখন অনেকটাই স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তিনি এ বন্দরকে আরো গতিশীল করার জন্য আরো বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানান।
আই/এসি