চোখের জলে ভারতের বিদায়, ফাইনালে নিউজিল্যান্ড
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:০৭ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৯:১৯ এএম, ১১ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কিউই বোলারদের তোপে ৯২ রানেই ছয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে ভারত। পরে ধোনিকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তম উইকেটে পাল্টা আক্রমণ করে খেলা জমিয়ে দেন জাদেজা। তবে শেষ দিকের চাপে এ দুজনের আউটে চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো ভারত। ফলে ফাইনালে চলে গেল নিউজিল্যান্ড।
কিউইদের কাছে ১৮ রানে হেরে মূলত ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটালো ভারত। কেননা বিশ্বকাপে আগের সাত দেখায় চারটিতেই জয় পায় নিউজিল্যান্ড। আর ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে আগের তিন মোকাবেলায় তিনবারই ভারতকে হারায় কিউইরা।
ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম সেমিফাইনালে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ভারতকে শুরু থেকেই চেপে ধরেন কিউই পেসাররা। আর সেই চাপ থেকে মুক্ত হতে পারেননি এ বিশ্বকাপের সর্বাধিক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়া ওপেনার রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় ওভারেই ম্যাট হেনরির বলে কিপার ল্যাথামের গ্লাভসে ধরা পড়েন এ আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আউট হওার আগে নিজের নামের পাশে যোগ করতে পারেন মাত্র ১ রান। ভারতের রান তখন মাত্র ৪।
এরপর তৃতীয় ওভারে এসে নতুন ক্রিজে আসা অধিনায়ক কোহলিকেও দাঁড়ানোর সুযোগ দেননি ট্রেন্ট বোল্ট। এই বাঁহাতির লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফেরার আগে কোহলিও করেন সেই ১ রান। পরের ওভারে আবারো ভারতীয় শিবিরে আঘাত হানেন হেনরি। এবার আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলকেও সেই ১ রানেই ক্রিজ ছাড়া করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন ডানহাতি পেসার। অর্থাৎ তিন টপ অর্ডারের রান ১, ১ ও ১। যা এবারের বিশ্বকাপে সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা!
আর এর ফলে মাত্র ৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান দিনেশ কার্তিক ও ঋষভ পন্ত। কিন্তু তাদের সে চেষ্টায় বাধ সাধেন ঘাতক ম্যাট হেনরি। এক বাউন্ডারিতে ৬ রান করা কার্তিককেও তুলে নেন তিনি। জিমি নিশামের অসাধারণ এক ক্যাচ হয়ে কার্তিক যখন ফেরেন, তখন ভারতের রান ১০ ওভারে ২৪। আর এতেই কাঁপতে থাকে অলব্লুজ শিবির।
পরে ধোনিকে নিয়ে শতাধিক রানের জুটি গড়ে এবং নিজে ঝোড়ো ফিফটি হাঁকিয়ে জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বাঁহাতি জাদেজা। কিন্তু ৪৮তম ওভারে বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরলে ফের হারের শঙ্কা জাগে ভারতের। ফেরার আগে ৫৯ বলে চারটি করে চার-ছয়ে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন জাদেজা।
আর পরের ওভারেই ফিফটি করে ধোনি রান আউট হলে শেষ হয় ভারতের জয়ের স্বপ্ন। পরে ভুবনেশ্বর (০) এবং চাহালকে (৫) তুলে নিয়ে ভারতের সেই শংকাকে বাস্তবে রূপ দেন ফারগুসন ও নিশাম।
এর আগে হার্দিক পান্ডিয়া ও ঋষভ পন্ত আউট হয়েছেন সমান ৩২ রান করে। এ দুজনেরই উইকেট তুলে নেন স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।
কিউই বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং করেন ম্যাট হেনরি। ৩৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সেরাও হন এই ডানহাতি পেসার।
এর আগে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে উইলিয়ামসন ও রস টেলরের লড়াকু ফিফটিতে ভর করে ভারতকে ২৪০ রানের লক্ষ্য দেয় নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টি বিঘ্নিত এ সেমিফাইনালের প্রথম দিন ৪৬.১ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২১১ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। আর আজ দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিং করে বাকি ২৩ বলে ২৮ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় কিউইরা। তবে এই রান তুলেতে গিয়েই তাদের হারাতে হয়েছে আরো তিনটি উইকেট।
আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান রস টেলর আউট হন আরো সাত রান যোগ করে ৭৪ রানে। তার ৯০ বলের ইনিংসটিতে ছিলো তিনটি চার এবং কিউই ইনিংসের একমাত্র ছক্কার মার। আর ল্যাথামও আউট হন টেলরের মত সাত রান যোগ করেই।
এছাড়া আগের দিন দলের ইনিংসকে মজবুত ভিতের ওপর দাড় করাতে ৯৫ বলে ৬৭ রানের অতি ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন বিপদের কাণ্ডারি কেন উইলিয়ামসন। যাতে চারের মার ছিলো ছয়টি। আর এই ইনিংস খেলে নয় ম্যাচের আট ইনিংসে ব্যাট করে দুটি করে শতক আর অর্ধশতকে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫৪৮ রান করেন কিউই রান মেশিন।
এদিকে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট লাভ করেন তিনি। এছাড়া বুমরাহ, পান্ডিয়া, চাহাল ও জাদেজা প্রত্যেকে একটি করে উইকেট তুলে নেন।
এনএস/