ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সফল উদ্যোক্তা,সফল সংগঠক আমজাদ ও নিলুফা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৩৩ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৩৪ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

আন্তরিকতা, একাগ্রতা, পরিশ্রম,সততা ও প্রবল ইচ্ছে শক্তি থাকলে যে কোন স্বপ্ন হাতে এসে ধরা দেয়। এটার উজ্জল দৃষ্টান্ত সফল উদ্যোক্তা,সংগঠক আমজাদ হোসেন ও নিলুফা ইয়াছমিন। পড়াশুনা করে অনেকেই চাকরির খোঁজ করে, তবে এর ব্যতিক্রম ছিলো আমজাদ ও নিলুফা।

নিজেদের ছোট স্বপ্ন বাস্তবায়নে এসে আজ তারা দুজনেই সফল উদ্যোক্তা ও সফল সংগঠক। আমজাদ হোসেন নিজের জমানো টাকা দিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কারিগরী ও হস্ত শিল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। আর নিলুফা ইয়াছমিন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বর্তমানে তারা নিজেরাই চট্টলা নারী প্রগতি সংস্থা (সিএনপিএস) নামে একটা সংস্থা পরিচালনা করছেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নিলুফা ইয়াছমিন। এর কাজ হচ্ছে, অসহায়,দরিদ্র,ছিন্নমূল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়ন করা। এ পর্যন্ত প্রায় ১ (এক) হাজারের অধিক নারী ও পুরুষ এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাবলম্বী হয়েছে।

তাদের সফল উদ্যোক্তা ও সফল সংগঠক হয়ে উঠা ও নতুন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ নিয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনকে। সাক্ষাতকারটি নিয়ে একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে টিভি অনলাইন: চট্টলা নারী প্রগতি সংস্থা(সিএনপিএস) এর কার্যক্রম সম্পর্কে যদি একটু বলেন।

আমজাদ হোসেনঃ চট্টলা নারী প্রগতি সংস্থা(সিএনপিএস) বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত একটি বেসরকারি উন্নয়নমুখী সংস্থা। এই সংস্থা সমাজের অসহায়,দরিদ্র,ছিন্নমূল,পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়নে কাজ করে। নারীদের বিভিন্ন কারিগরি ও হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলে। বিভিন্ন হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করতেও এই সংস্থা কাজ করে। যে সমস্ত শিশুরা পড়ালেখা করতে পারেনা তাদের পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করা সহ সংস্থা স্বাস্থ্য,পুষ্টি,জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করে। বেকার যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধিমুলক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করা সহ উন্নয়ন মুলক নানা মুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করে এই সংস্থা।

একুশে টিভি অনলাইন: কিভাবে চট্টলা নারী প্রগতি সংস্থা(সিএনপিএস) এর পথ চলা শুরু হয়?

আমজাদ হোসেনঃ আসলে আমি যখন খুব ছোট তখন থেকেই মনের ভেতর সুপ্ত একটি বাসনা ছিলো সমাজের ছিন্নমূল দরিদ্র অসহায়,অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করবো। আর সেই সুপ্ত বাসনা টা আমি বড় হওয়ার পর আরো গাড় হতে থাকে। ২০১৫ সনের দিকে চট্টগ্রাম সিটি গেইটের পূ্র্বে অবস্থিত পাহাড়ী এলাকা শাপলা এলাকার একটি কুঁড়েঘরকে অফিস বানিয়ে আজকের চট্টলা নারী প্রগতি সংস্থা(সিএনপিএস) এর পথ চলা শুরু হয়।

একুশে টিভি অনলাইনঃ পড়াশোনা করে কোন চাকরি বাকরি না করে এ ধরনের কার্যক্রমে কেন নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন?

আমজাদ হোসেনঃ আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি বরাবরই একটু ব্যতিক্রম। আর একটু স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলাম। ছোট বেলা থেকে বাবাকে দেখেছি ব্যবসা করতে,তাই পড়ালেখা করে কিছুদিন চাকুরি করে,পরে আবার পারিবারিক ব্যবসায় মনোযোগ দিই। পরে চিন্তা করলাম সমাজ,দেশ তথা দেশের মানুষের জন্য অনেক দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। মুলতঃ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমি নিজেকে এমন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি।

একুশে টিভি অনলাইনঃ সমাজ সেবক হলেন কেন?

আমজাদ হোসেনঃ সমাজ সেবক কতটুকু হতে পেরেছি সেটা বলা মুশকিল। নিজের ভালো লাগা,সমাজের জন্য কিছু করতে চাওয়া আর নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই সমাজ সেবক হয়েছি।

একুশে টিভি অনলাইনঃ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট উদ্যোক্তাদের জন্য কতটুকু উপযোগী,বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কতোটা উপযোগী?

আমজাদ হোসেনঃ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।সে ক্ষেত্রে এখন নারীরা অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগে বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনীর আধিক্য দেখা গেলেও সীমিতসংখ্যক সেবা ও প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। এই মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদেরই তুলনামূলক বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।তাছাড়া বর্তমান সরকার নারী বান্ধব সরকার।নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোও এখন বেশ সুবিধা দিচ্ছে।সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে আমাদের দেশের এই প্রেক্ষাপটে নারী উদ্যোক্তারা বেশ ভালোই কাজ করছে।

একুশে টিভি অনলাইনঃ আপনাদের সংস্থার বর্তমান অবকাঠামো অবস্থা কেমন?

নিলুফা ইয়াছমিনঃ ২০১৫ সনে যখন আমি শুরু করি তখনকার অবকাঠামো আর এখনকার অবকাঠামোগত অবস্থা অনেক ব্যবধান রয়েছে। শুরুতে আমরা অনেক কষ্ট করেছি,অনেক শ্রম দিয়েছি। এখন একটি এক্সিকিউটিভ কমিটি দ্বারা সকল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং আমজাদ হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সংস্থার অবস্থা প্রথম যখন শুরু করি তার থেকে এখন মোটামোটি ভালো। তবে সমাজের বিত্তবানদের,সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য পেলে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবো বলে আমি আশা করি।

একুশে টিভি অনলাইনঃ তৃণমূলে নারী উদ্যোক্তারা কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পড়ে?

নিলুফা ইয়াছমিনঃ তৃনমূল নারী উদ্যোক্তারা কাজ করতে গেলে সাধারনত একটু বৈষ্যমের স্বীকার হয়।সামাজিক মানসিক সাপোর্ট পেতে তাদের একটু কষ্ট হয়ে উঠে।পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও যে উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পাশাপাশি অন্যে ১০ জনের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে সেটা মানতে চাইনা এক শ্রেনী মানুষ।তবে খুব শীগ্রই এসব সমস্যারও অবসান হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

একুশে টিভি অনলাইনঃ আপনার সংস্থার আগামীদিনের পরিকল্পনা কি?
আমজাদ হোসেনঃ সত্যি বলতে স্বপ্ন বা পরিকল্পনা যাই বলেন না কেন এটা একটা বিশাল ব্যাপার। ভবিষ্যতে একটি বৃদ্ধাশ্রম,অসহায় নিপীড়িত মানুষের জন্য একটি বিনুল্যের হাসপাতাল সহ অনেক স্বপ্ন আর পরিকল্পনা রয়েছে। জানিনা কতটুকু বাস্তবায়িত করতে পারি।তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাকীটা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সহায়।

একুশে টিভি অনলাইনঃ এই সংস্থা শুরু করতে গিয়ে কোন রকম বাধা বিপত্তির মুখে পড়েছিলেন কি?
নিলুফা ইয়াছমিনঃ অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যি বলতে আমাদের সমাজে খুব কম লোকই আছে যারা ঘরের খেয়ে বনের মহিষ চড়াই। আজকাল সবাই নিজের লাভটুকুই আগে দেখে। সিটি গেইটের পূর্বে জনাজীর্ণ শাপলা একাকায় যখন প্রথম বাচ্চাদের নিয়ে,মহিলাদের নিয়ে কাজ কাজ শুরু করি তখন অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছিলাম। এলাকায় যাদের বাচ্চারা পড়ালেখা করতোনা তাদের যখন আমরা প্রথম প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা বলতাম,নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে পড়াতাম তখন অনেকে আমাদের ছেলে ধরা,শিশু পাচারকারী,নারী পাচারকারীও বলেছিল। এমন এমন কঠিন বাধা বিলত্তির মুঝে পড়েছি যা বলার মতো নই। পরে সবাই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল।

একুশে টিভি অনলাইনঃ বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কোন ধরনের সহযোগিতা পান কিনা?

নিলুফা ইয়াছমিনঃ এত বছর কাজ করছি পর্যন্ত অদ্যবদি মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের কোন কাজে সহযোগিতা পাই নাই। তবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কথা না বললেই নই। কোতয়ালি ইউনিট যুব কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান উদ্দীন স্যারের অনেক অনেক সহযোগিতা আমরা কাজের ক্ষেত্রে পাই,যা এখন বর্ণনা করলে অনেক সময় লাগবে। স্বাস্থ অধিদপ্তর,পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহযোগিতাও পাই।

একুশে টিভি অনলাইনঃ আপনাদের সংস্থা সমাজ ও দেশের মানুষের জন্য বর্তমানে কি কি কাজ করছে?

আমজাদ হোসেনঃ সমাজের অবহেলিত,ছিন্নমূল,অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতে আমাদের সংস্থায় সম্পুর্ণ বিনামুল্যে নানা রকম প্রশিক্ষণ মুলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে। দরিদ্র বাচ্চাদের পড়ালেখার জন্য কাজ করছে।গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও আরো উন্নয়নমুলক নানান কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে।


টিআর/