ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

কোরবানির চাহিদা মিটবে দেশি পশুতেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ১৩ জুলাই ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৩:০৫ পিএম, ১৩ জুলাই ২০১৯ শনিবার

একটা সময় ছিল যখন কোরবানির ঈদ আসলেই বৈধ-অবৈধ পথে নেপাল, মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানি করা হত কোরবানির পশু। এখন সময় বদলেছে, উন্নত প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে পশু পালন ও উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।  সরকারের নানা উদ্যোগে দেশই এখন গরু ও ছাগল উৎপাদন হচ্ছে চাহিদার চেয়ে কয়েকগুন বেশি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চলতি বছরের কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর তথ্য থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন লাখ। দেশে সারা বছর মাংসের জোগান ও কোরবানির চাহিদা মেটানোর পর বিদেশেও রফতানি হচ্ছে গরু-ছাগলের মাংস। এক কথায় দেশে গবাদিপশু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও কোরবানির ঈদে পাশের দেশগুলো থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ গরু আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হতো। সারা বছরে যে সংখ্যা ছাড়িয়ে যেত ৪০ লাখে।

আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষে গবাদিপশুর সংখ্যা-সংক্রান্ত একটি চিঠি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। যেখানে থেকে জানা যায়, আসন্ন ঈদুল আজহায় এবারও কোরবানির গরুর চাহিদা মেটাবে দেশি গরু। এর জন্য এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩ পশু প্রস্তুত রয়েছে। ফলে চোরাই পথে গরু-ছাগল না এলেও কোনো সংকট হবে না।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এককভাবে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘সীমান্ত পথে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হয় গরু-ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। দেশীয় গরু উৎপাদনে কয়েকটি প্রকল্প ও টিম গঠন করা হয়। নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হয় খামারিদের সঙ্গে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। গ্রামে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। সারা বছরই খামারিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে কোরবানির ঈদের বাজারের শেষ দিন অনেক গরু ফেরত যাচ্ছে এখন। ভারত, মিয়ানমার এবং নেপাল থেকে গরু আমদানি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর সংকট নয়, এখন কী পরিমাণ গরু অবিক্রীত থাকবে, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কোরবানিতে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি গবাদিপশু আছে এখন দেশে।’

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সম্প্রতি সারাদেশে গরু-ছাগলের চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে একটা সাড়া পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করছে, তাদের অধিকাংশ এখন ঋণ দিচ্ছে গরু পালনে। এ খাতে বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলোও। এতে গরু পালন বেড়েছে অনেক দ্রুত। চামড়াশিল্পেও রফতানি আয় বাড়ছে। বাণিজ্যিকভাবে গরু উৎপাদন ছাড়াও কৃষকরা গরু লালন-পালন করে দুধ ও বছর শেষে গরু বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়। জাতগত বৈশিষ্ট্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।’

উল্লেখ্য, গত বছর কোরবানিতে জবাই হয়েছিল ১ কোটি ১৫ লাখ পশু। এর মধ্যে ছাগল-ভেড়া ছিল ৭১ লাখ। গরু ৪৪ লাখ।
দেশে গত বছরের চেয়ে গরুর উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার আর ছাগল-ভেড়ার উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে হঠাৎ করে ভারত সরকার বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। এরপর গরু-মোটাতাজাকরণে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে আড়াই শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয় খামারিদের। ওই সুবিধা পেয়ে সারাদেশে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার তরুণ গরুর খামার গড়ে তোলেন। ফলে গরু-ছাগলের উৎপাদন বাড়ছে।

এসএ/