সাকিব-ই কি হচ্ছেন টুর্নামেন্ট সেরা?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫১ পিএম, ১৩ জুলাই ২০১৯ শনিবার
বিশ্বকাপ ২০১৯ শের শুরু থেকে নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত শুধু সাকিবের পানেই চেয়ে আশাবাদী ছিলেন বাংলাদেশের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক। তবে শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয় তাদের। কারণ সেরা চারে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। উপরন্তু আরও চার ধাপ নিচে অর্থাৎ আট নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে দলটি।
তবে একেবারে হতাশ করেননি বিশ্বসেরা অলরাউণ্ডার সাকিব আল হাসান। যা করেছেন তাতেই বাজিমাত। বিশ্বকাপের মঞ্চে তার মতো অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি আর কেউই। যদিও সাকিবের এ পারফরম্যান্স একটি জায়গাতেই ম্লান হয়ে যায়, তা হলো- দল সেমিতে না খেলা। কারণ সাকিবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাদবাকি যারা তালিকার ওপরের দিকে আছেন, তাদের কেউ না কেউ অন্তত সেমিফাইনাল খেলেছেন। কেউ আবার ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছেন।
কিন্তু তাদের চেয়ে একটা জায়গাতে এগিয়ে আছেন সাকিব, সেটা হলো সামগ্রিক পারফরম্যান্স। হ্যাঁ, ব্যাটে-বলে এমন পারফরম্যান্স আর কেউই দেখাতে পারেনি। সাকিব মোট আটটি ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে দুই সেঞ্চুরি আর পাঁচ ফিফটিতে ৬০৬ রান তুলেছেন ৮৬.৫৭ গড়ে। যা এখন পর্যন্ত এ টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড়।
অন্যদিকে বল হাতে সাকিব ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১১টি উইকেট। যা আরেকজন বোলারের সমান পারফরম্যান্স। অর্থ্যাৎ বল ও ব্যাট উভয় ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন, সেসঙ্গে দলের তিনটি জয়ে ভূমিকা রেখেছেন সাকিব। প্রথম দুটি জয়ের একটিতে করেছেন সেঞ্চুরি, একটিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। মোট আট ম্যাচ খেলে ৭টিতেই ন্যুনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন বিশ্বসেরা এ অলরাউণ্ডার।
এখানেই শেষ নয়, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ এর ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। যেখানে তার সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিলো ৪১ রান। আর এমন নান্দনিক চৌকস পারফরম্যান্স দিয়েই জায়গা করে নিয়েছেন এ বিশ্বকাপের সেরাদের সেরা হওয়ার দৌঁড়ের প্রথম স্থানে।
তবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের সে লড়াইয়ে প্রথম স্থানে থাকলেও, সেরা এ পুরস্কারটি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করছে একটা মাত্র অন্তরায়। তা হলো- তার দল সেমিতে না ওঠা। সেমিতে না উঠলেও দলের আরও বেশি জয় নিশ্চিতে কার্যকর ভূমিকার অভাবটাই বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। আরও দুটি জয় নিয়ে বাংলাদেশ দল যদি পাঁচে বা ছয়ে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করত, তাহলেও টুর্ণামেন্ট সেরা হতে বিষয়টি জোরালো ভূমিকা রাখতো।
কারণ, সেই ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সাতবার দেয়া এই পুরস্কারটি যিনিই পেয়েছেন, তিনি হয় সেমিতে খেলেছেন নয়তো ফাইনাল। যেমন- ওই বছর প্রথমবার টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান মার্টিন ক্রো। ৪৫৬ রান করেছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৯৬ সালে টুর্নামেন্ট সেরা হন লঙ্কান ওপেনার সনৎ জয়সুরিয়া। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ২২১ রানের সঙ্গে ৭টি উইকেটও নেন সনৎ।
১৯৯৯ সালে টুর্নামেন্ট সেরা হন ল্যান্স ক্লুজনার। সেবার তার দল দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে হেরে যায়। ব্যাট হাতে ২৮১ রান ও বল হাতে ১৭টি উইকেট নিয়েছিলেন ক্লুজনার।
এরপর ২০০৩ সালে ব্যাটিং ইতিহাসে বিশ্বকাপের সেরা একটি পারফরম্যান্স দেখান ব্যাটিং মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। ৬৭৩ রান করেছিলেন তিনি। যদিও ফাইনালে হেরে গিয়েছিল তার দল ভারত।
আর ২০০৭ সালে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার পান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, ১৭টি উইকেট নিয়ে।
২০১১ সালে পান যুবরাজ সিং। ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন এই অলরাউন্ডার। তাঁর এমন পারফরম্যান্সে সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত।
২০১৫ সালে আবারো চ্যাম্পিয়ন হয় সেই অস্ট্রেলিয়া। সেবার সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার পান মিচেল স্টার্ক, ২২টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
সুতরাং পরিসংখ্যান আর রেকর্ড যাই বলুন, তাতে দেখা যাচ্ছে- সেমিতে খেলা দলের মধ্য থেকেই সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন দু`জন। আর বাকি পাঁচজনই সেরা হয়েছেন ফাইনাল খেলা দল থেকেই। তাই এ ক্ষেত্রে সাকিবকে টপকে সেরা হওয়ার চান্স আছে শুধু দুজনেরই। তারা হলেন- ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো রুট, আর অপরজন কিউই ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন।
এ পর্যন্ত ৯ ম্যাচে সমান দুটি করে সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরিতে কিউই ক্যাপ্টেনের রান সংখ্যা ৫৪৮। ঝুলিতে উইকেট আছে মাত্র ২টি। ক্যাচ নিয়েছেন ছয়টি। মূলত ব্যাটিং ও ক্যাপ্টেন্সিতে তাঁর কার্যকরী ভূমিকাতে প্রথম পাঁচ ম্যাচের পাওয়া জয়ই নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে উঠতে সাহায্য করে। তার নির্ভরযোগ্য কাঁধে ভর করেই টানা দ্বিতীয়বার বিশ্ব আসরের ফাইনালে উঠে গেছে কিউইরা। ফলে টুর্ণামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে আছেন তিনিও।
অন্যদিকে, ১০ ম্যাচে দুটি শতক ও তিনটি অর্ধশতকে ৬৮.৬২ গড়ে ৫৪৯ রান করেছেন জো রুট। এছাড়াও ১০ ম্যাচে ১২টি ক্যাচ ধরেছেন তিনি, সেইসঙ্গে উইকেটও নিয়েছেন ২টি। তাইতো ফাইনাল ম্যাচ হাতে রেখেও এবারের টুর্ণামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে তাঁর নামটিও উঠছে জোরালো ভাবেই।
এদিকে, সামগ্রিক পারফরম্যান্সে এ দুজনের থেকে ঢের এগিয়ে আছেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আট ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি আর পাঁচ ফিফটিতে ৬০৬ রান আর ১১টি উইকেটের সঙ্গে ক্যাচ নিয়েছেন তিনটি। তাই টুর্ণামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে প্রথমেই আছেন সাকিব। তবে রুট-উইলিয়ামসনের কেউ যদি ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন, তাহলে সাকিবের পিছনে থাকার পরও তিনিই হতে পারেন ম্যান অব দ্য টুর্ণামেন্ট!
এনএস/আরকে