`হাস্যকর` নিয়ম নিয়ে আইসিসিকে ধুয়ে দিচ্ছেন সবাই!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:১২ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার
অদ্যাবধি ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার সুযোগ পায় ক্রিকেটবিশ্ব। রোববার ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসে অবিশ্বাস্য সে ম্যাচে দুদলের ইনিংসই থামে ২৪১ রানে। ফলে ম্যাচ নিষ্পত্তির জন্য ফাইনাল গড়ায় সুপার ওভারে। এতে নিউজিল্যান্ডকে ১৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ইংল্যান্ড। জবাবে সমান ১৫ রানই তুলতে সক্ষম হয় উইলিয়ামসন বাহিনী।
শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারি বেশি হাঁকানোয় বিজয়ী ঘোষিত হয় মরগ্যানের দল। ক্রিকেট ইতিহাসে ২৩ বছর পর নতুন এক চ্যাম্পিয়ন পেলো বিশ্ব। আর ক্রিকেট তাঁর ঘরে ফিরলো ৪৪ বছর পর।
দ্বাদশ আসরের ফাইনালটি ইতিহাসের সর্বসেরা ফাইনালের স্বীকৃতি পেলেও এ নিয়ে বিতর্ক কম হচ্ছে না। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হচ্ছে খোদ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিকে। ফাইনাল নিষ্পত্তিতে আইসিসির যে নিয়ম ব্যবহৃত হয়েছে-মূলত সমালোচনা হচ্ছে সেটারই।
নাটকীয়তাপূর্ণ ওই ম্যাচে দেখা যায়, মূল ম্যাচে জয়ের জন্য শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। স্ট্রাইকে বেন স্টোকস, অপর প্রান্তে আদিল রশিদ। স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ইংলিশ অলরাউন্ডার।
প্রথম দুই বল থেকে কোন রান তুলতে না পারলেও তৃতীয় বলে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাকান স্টোকস। চতুর্থ বলটি আবারো মিড উইকেটে পাঠিয়ে দিয়ে ২ রান নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এসময় রান আউটের জন্য থ্রো করেন মার্টিন গাপটিল, কিন্তু বলটি স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারিতে চলে যায়।
ফলে ২ রানের জায়গায় ৬ রান যোগ হয় ইংল্যান্ডের স্কোরে। তখন ওই বাউন্ডারিটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পরে আরও তিন রান নিয়ে ম্যাচটি টাই করে ইংলিশরা। ফলে ফাইনাল গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেও নতুন নাটকীয়তার জন্ম নেয়। কারণ নিষ্পত্তির সে ওভারেও যে টাই হয়। ফলে বাউন্ডারি সংখ্যার ভিত্তিতে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পায় স্বাগতিকরা।
আইসিসির নিয়মানুসারে কিউইদের (১৮) থেকে ইংলিশদের (২২) বাউন্ডারি বেশি হওয়ায় শেষ হাসিটা মর্গানরাই হাসে। এতেই ২৭ বছর পর এসে ট্রফি ঘরে তুললো ইংলিশরা। আর স্বপ্নভঙ্গ হয় কিউইদের। দোর্দণ্ড ক্রিকেট খেলেও নিউজিল্যান্ডের শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা। তাদের কাঠগড়ায় আইসিসির অভিনব নিয়ম।
এ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার পেস কিংবদন্তি ব্রেট লি। সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে তিনি বলেন, ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন। দুর্ভাগ্য নিউজিল্যান্ডের। তাদের জন্য সমবেদনা। তবে বিজয়ী বেছে নিতে এটি খুব বাজে পদ্ধতি। এ নিয়ম পাল্টাতেই হবে। এখন সেটা না বলে থাকতে পারছি না।
এদিকে এমন অদ্ভুত নিয়মের জন্য ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির কড়া সমালোচনা করেছেন কিউই কিংবদন্তি স্কট স্টাইরিস। বলেছেন, আইসিসির এমন নিয়ম সত্যিই হাস্যকর। এটা কোন নিয়ম হতে পারেনা।
ব্রেট লী, স্টাইরিসের মত আইসিসির এ নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক ক্রিকেটারসহ অনেকেই। তাদের একজন হলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। তিনি ‘টুইট’ করেছেন এই ভাষায়- 'বুঝলাম না বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো ম্যাচের ভাগ্য কীভাবে বেশি মারা বাউন্ডারির সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হয়। এটি আইসিসির হাস্যকর নিয়ম।
তাহলে এমন নাটকীয় ম্যাচে কীভাবে নির্ধারিত হতো চ্যাম্পিয়ন? এমন প্রশ্নের জবাব দিয়ে সমাধানও বাতলে দিয়েছেন ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ওপেনার। তিনি বলেন, ম্যাচটি টাই হওয়া উচিত ছিল। অর্থাৎ যৌথ চ্যাম্পিয়ন! নখ কামড়ানো ফাইনাল উপহার দেয়ার জন্য নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড দু'দলকেই আমি অভিনন্দন জানাব। আমার মতে, উভয়ই জয়ী!
ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে টুইট করেছেন যুবরাজ সিংও। তিনি তো বলেই দিয়েছেন এই নিয়ম তিনি মানেন না। ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা এই ক্রিকেটার লিখেছেন,‘আমি এই নিয়ম মানি না! কিন্তু নিয়ম তো নিয়মই। অভিনন্দন ইংল্যান্ডকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জয়ের জন্য। তবে আমার হৃদয়ের ভালোবাসা কিউইদের জন্য, যারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন।’
‘দুর্দান্ত খেলা ও মহাকাব্যিক ফাইনাল,’ টুইটারে এভাবেই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন যুবরাজ সিং।
পাকিস্তানের সাবেক পেস বোলার শোয়েব আখতার বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ ফাইনাল হিসেবে এটা অবিশ্বাস্য। মনে হচ্ছে- ট্রফি ভাগাভাগি হয়েছে, ম্যাচ টাই, সুপার ওভার টাই। তবুও বেশি বাউন্ডারি মেরে জিতলো ইংল্যান্ড। সব মিলিয়ে লর্ডসে দারুণ এক দৃশ্যপট।’
এদিকে, ঘটনায় কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন তথা নিউজিল্যান্ডের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইংলিশদের জয়ের নায়ক বেন স্টোকস। এই অলরাউন্ডার বলেন, এই ওভার-থ্রোর জন্য তিনি সারাজীবন নিউজিল্যান্ডের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী থাকবেন। যদিও কিউই অধিনায়ক এটাকে খেলার অংশ হিসেবেই মনে করেন বলে জানান।
অন্যদিকে ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগানতো প্রকাশ্যে বলেই ফেললেন- এটা এমন একটা বিষয়, যার জন্য আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। নিউজিল্যান্ডের জায়গায় যদি আমরা হতাম, পরিস্থিতি কেমন হতো ভাবতেই খারাপ লাগে।
এনএস/এসি