ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

এরশাদও মারা যায়!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০১ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার

বাংলাদেশের সাবেক সামরিক শাসক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এর ব্যবহারকারীরা। জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর খবর জানিয়ে অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। আবার অনেক ব্যবহারকারী তাঁর শাসনামলে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ফেসবুক ব্যবহারকারী অজন্তা দেব রায়, জেনারেল এরশাদকে নিয়ে হুমায়ূন আজাদের একটি লেখার অংশ বিশেষ তুলে ধরেছেন যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ উঠে এসেছে। এরআগে দেয়া এক পোস্টে মিজ রায় বলেছেন,"যেকোন মৃত্যুই বেদনার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু মানুষের মৃত্যুতে শোকবার্তায় ভালো ভালো কথা বলা যায় না। মন থেকে বলা যায় না-তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন।

আলতাফ পারভেজ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার পোস্টে এরশাদের শাসনামল সম্পর্কে বলেন,"বিশ্বে আজও 'এরশাদ'দের অভাব পড়ছে না। দক্ষিণ এশিয়ায় তো নয়ই। কারণ স্বৈরতন্ত্র এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে নাগরিক সমাজ হিসেবে আমাদের বোঝাপড়ায় প্রবল ঘাটতি আছে।"

নিজের পোস্টে তিনি আরো বলেন,"তার মৃত্যু হয়েছে বলে তাকে নিয়ে ভালো কথা বলার কিছু নাই। আশা করি রংপুরের একঘেয়ে রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন আসবে।"

যদিও কোন কোন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন, যাদের একটি বড় অংশ বয়সে তরুণ।  পোস্টের এক কমেন্টে ফেসবুক ব্যবহারকারী মামুন কবি বলেছেন, "আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন আমিন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে অনেক সরকারের চেয়ে উনার সরকার ছিল তুলনামূলক অনেক ভালো। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। "

আরেক ব্যবহারকারী এমডি শাহিন ইসলাম বলেছেন, "উনি ভালো কাজ করেছেন অনেক। কিন্তু তার শেষ বেলায় জনগণের চাওয়া-পাওয়ার কোন মূল্য না দিয়ে তার নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন, তার কোন দাম তিনি পাননি, বরঞ্চ রাজনীতিকভাবে দেশকে এক চরম অশান্তিতে রেখে গেছেন।" জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের একটি বড় অংশই এসেছে যারা তার শাসনামল দেখেছেন তাদের কাছ থেকে। সেই মানুষটাও  মারা গেছে। আমারও একদিন মারা যাবো।

এরশাদের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য আসার পেছনে তাঁর শাসনামলের প্রতি মানুষের ক্ষোভ এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজ করেছে বলে মনে করছেন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, "তিনি(এরশাদ) যে ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তখন মানুষের মতামত প্রকাশের সুযোগ ছিলো না।

দ্বিতীয়ত, তিনি যখন রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন তখনও তার বিরুদ্ধে বলার কোন সুযোগ ছিলো না কারণ তিনি ক্ষমতাধরদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিলেন। মানুষ তার শাসনে খুবই বিক্ষুব্ধ। যার কারণে তার মৃত্যুর পর মানুষ এগুলো বলছে।"

তিনি বলেন,"নানা হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার সন্দেহ আছে এবং মামলাও হয়েছে। মঞ্জুর হত্যার কোন রায় হলো না, তদন্ত ও পুনঃতদন্ত হতে থাকলো। এতে মানুষ হতাশ হয়েছে। তার এধরণের রহস্যজনক কাজগুলো উন্মোচিত হয়নি। মানুষের মনে একটা ভীষণ রকমের অস্বস্তি রয়েছে যে এই মামলাগুলোর কোন বিচার হয়নি।"

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সামিনা লুতফা বলেন, বর্তমান প্রজন্মের যারা এরশাদের শাসনামল দেখেনি তারা যাতে সে সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ভুলে না যান তা মনে করিয়ে দেয়াকে অনেকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন।

তিনি এই প্রতিক্রিয়াকে নেতিবাচক বলছেন না। তার মতে, "সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন তাদের অনেকেরই তারুণ্য কেটেছে এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। যাদের স্মৃতিতে বিষয়টা তাজা আছে। তাই তারা নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাইছেন।"তিনি বলেন, "এরশাদ তো কবি সাহিত্যিক ছিলেন না যে তার কবিতা গল্প নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের সাবেক সেনানায়ক ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার আমলের বিষয়গুলোই আসবে সেটাই স্বাভাবিক।"

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা কেন তার মৃত্যুর সময়টাকেই বেছে নিলেন এমন প্রশ্নে মিজ লুতফা বলেন, "মৃত্যুর পর মানুষের কৃতকর্মের একটা সালতামামি হয়। স্বাভাবিকভাবে তার ভালো দিকগুলো তুলে ধরা হলেও যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকেন তাদের নেতিবাচক কাজকর্মের দিকে লোকের নজর থাকে। আর আমরা তো জানি যে, আমরা জানি, তার শাসনামলে দীপালি, জয়নাল, ডক্টর মিলন, নূর হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে।"

তিনি বলেন, "আমি মনে করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেহেতু নেটিজেনদের এক ধরণের জানালা, তাই তারা যে কথাটি এতোদিন ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মধ্য দিয়ে বলেছে সেটি সরাসরি বলতে তারা যেন তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলো। তবে একে বর্তমান রাজনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি। বলেন, "মানুষের কাছ থেকে তার গত ১০ বছরে রাজনীতিতে থাকার বিশ্লেষণ আসবে, তার রাজনৈতিক চালের বিশ্লেষণ আসবে যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বেশি ইতিবাচক হবে ভবিষ্যতে

টিআর/