বিদেশিরাই বিশ্বকাপ জিতিয়েছে ইংল্যান্ডকে, সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:২২ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার
নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে দ্বাদশ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ জেতার পর এই বিজয়ে ইংল্যান্ড দলের অভিবাসী ক্রিকেটারদের ভুমিকা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। রীতিমত ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে।
ডানপন্থী ইংলিশ রাজনীতিবিদ জ্যাকব রিস-মগ বিশ্বকাপ জয়ের পর টুইট করেছেন, ইংল্যান্ড কোনমতে জিতেছে, তবে "স্পষ্টতই আমাদের জেতার জন্য ইউরোপকে দরকার নেই।"
মূলত ব্রেক্সিটের দিকে ইঙ্গিত করে করা তাঁর এই তির্যক মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে হাজার হাজার ক্রিকেট ভক্ত ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালান রিস-মগকে লক্ষ্য করে। একজন লেখেন, "আপনার ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কই তো একজন আইরিশ।"
আরও অনেকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন এই বলে যে, এই ইংল্যান্ড দলে একাধিক খেলোয়াড় আছেন যাদের জন্ম অন্য দেশে।
কিথ বার্জ নামে একজন লিখেছেন, 'ইংল্যান্ড দারুণ খেলেছে, যার অধিনায়ক, প্রধান ব্যাটসম্যান, দ্রুততম বোলার, সেরা অলরাউন্ডার এবং প্রধান স্পিনার সবাই অভিবাসী বা অভিবাসীর সন্তান।'
ব্রিটিশ টেনিস তারকা এন্ডি মারে, যিনি আসলে একজন স্কটিশ, তিনি মন্তব্য করেছেন- নিউজিল্যান্ডে-জন্মানো স্টোকস আর বার্বাডোজে-জন্মানো আর্চার ইংল্যান্ড দলে থাকলেও ব্রেক্সিট-সমর্থকরা অভিবাসনকে সমাজের প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখছেন।
আসলেই তাই। বিশ্বকাপ জয়ী এই ইংল্যান্ড দলে শ্বেতাঙ্গ ইংরেজ খেলোয়াড় যেমন আছেন, তেমনি আছেন পাঁচজন বিদেশি ক্রিকেটার। যাদের জন্ম অন্য দেশে বা অভিবাসী পরিবারে।
বর্তমান ইংল্যান্ড দলটি সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা আছে, তারাও জানেন যে- ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানের জন্ম আয়ারল্যান্ডে। ফাইনাল সেরা খেলোয়াড় বেন স্টোকসের জন্ম নিউজিল্যান্ডে। গতি দানব জোফ্রা আর্চারের জন্ম ক্যারিবিয় দ্বিপপুঞ্জের বার্বাডোজে। মারকুটে ওপেনার জ্যাসন রয় এবং টম কারেন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। আর মঈন আলি এবং আদিল রশিদের জন্ম পাকিস্তান থেকে আসা অভিবাসী পরিবারে।
এই তালিকার দিকে তাকালে আপনাদের চোখে পড়বে আরও কিছু মজার ব্যাপার। তাহলো- ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ড দলের 'হিরো' বেন স্টোকস নিজেই জন্মসূত্রে একজন নিউজিল্যান্ডার। জন্মেছেন ক্রাইস্টচার্চে, তার বাবা নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে রাগবি খেলেছেন। রাগবি কোচ হিসেবে চাকরি নিয়েই স্টোকসের বাবার ইংল্যান্ডে আসা। তখন বেন স্টোকসের বয়স মাত্র ১২।
আগে নিয়ম ছিল ইংল্যান্ড দলে খেলতে হলে তাকে ব্রিটিশ নাগরিক হতে হবে, তার জন্ম ইংল্যান্ড বা ওয়েলসে হতে হবে। তবে গত বছর এই নিয়মে একটি ধারা সংযোজন করা হয়, যাতে বলা আছে- তিন বছর ইংল্যান্ড বা ওয়েলসে বসবাস করলেই একজন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী খেলতে পারবেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে।
এ শর্ত পূরণ করেই ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ক্যারিবিয় পেসার জোফ্রা আর্চার। কেউ কেউ বলেন, তাকে খেলার সুযোগ দিতেই ওই নিয়ম পরিবর্তন করেছে ইসিবি।
আর্চারের জন্ম ক্যারিবয়ান দ্বীপ বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে। তবে তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী এবং তার বাবা ইংরেজ। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুর্ধ-১৯ দলের হয়েও খেলেছেন দীর্ঘদেহি আর্চার।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক খোদ ইয়ন মরগ্যান একজন আইরিশ-বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের হয়েই খেলেছিলেন তিনি। মরগ্যানের মা ইংরেজ, বাবা আইরিশ।
তিনি আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন। কিন্তু তার মা ইংরেজ হওয়ায় জন্ম থেকেই ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিলেন তিনি। আর সেই সূত্রেই ২০০৭ সাল থেকে ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন পরিবারের সবার ছোট মরগান।
এনএস/