মন থেকেই রোগের উৎপত্তি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩৭ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
মানবদেহ এক অপূর্ব সৃষ্টি। মহাবিশ্বে এত চমৎকার, বুদ্ধিমান, সৃজনশীল, সংবেদনশীল আর কোনো সৃষ্টির অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়নি। দেহে রয়েছে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ। আর এই দেহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে রয়েছে সার্কুলেটরি, নার্ভাস, এন্ডোক্রাইন, ইমিউন সিস্টেমের মত অসংখ্য সিস্টেম।
তাই আমাদের সবার মধ্যে সুস্থ থাকার ক্ষমতা রয়েছে। সুস্থতা স্বাভাবিক, অসুস্থতা অস্বাভাবিক। প্রতিদিন আমরা কোটি কোটি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, এলার্জেন, ফাঙ্গি ইত্যাদির মুখোমুখি হচ্ছি এবং এর অতি ক্ষুদ্রাংশই রোগ পর্যন্ত গড়ায়।
দৈহিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেরই রোগের বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যারা রোগ নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তায় ভোগে তারা সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। আর যারা ব্যস্ত, রোগ নিয়ে ভাবার সময় পায় না, তাদের গড়পরতা স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর এখন স্বীকার করতে শুরু করেছেন যে, রোগের কারণ যেমন দৈহিক হতে পারে, তেমনি হতে পারে মানসিক। বহু জটিল রোগ, এমনকি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে মানসিক কারণে।
মার্কিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিচটন দীর্ঘ গবেষণার পর দেখিয়েছেন যে, হৃদরোগের কারণ প্রধানত মানসিক। তিনি বলেছেন, কোলেস্টেরল বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে করোনারি আর্টারিকে প্রায় ব্লক করে ফেললেই যে হার্ট অ্যাটাক হবে এমন কোনো কথা নেই।
দেখা গেছে আর্টারির ৮৫% বন্ধ অবস্থা নিয়েও একজন ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছে; আবার একেবারে পরিষ্কার আর্টারি নিয়েও অপর একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর ডা. মেয়ার ফ্রেডম্যান এবং ডা. রে রোজেনম্যান দীর্ঘ গবেষণার পর দেখান যে, হৃদরোগের সঙ্গে অস্থিরচিত্ততা, বিদ্বেষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনপদ্ধতির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
হার্ভার্ডের ফিজিওলজিস্ট ওয়াল্টার ক্যানন ১০০ বছর আগেই গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন মন যখন ভাবাবেগজনিত চাপ বা উৎকণ্ঠার সম্মুখীন হয় তখন শরীর নানাভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। রক্তে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণের পাশাপাশি হৃদকম্পন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, মলাশয়ের তৎপরতা বাড়ে, মূত্রাশয় সহজে সঙ্কুচিত হয়।
ডা. হার্বার্ট বেনসন এবং ডা. এডমন্ড জ্যাকবসন এই টেনশন বা উৎকণ্ঠার কারণে সৃষ্ট রোগের দীর্ঘ তালিকা তৈরি করেছেন। এই তালিকায় রয়েছে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, বাতব্যথা, বিষণ্ণতা বদমেজাজ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়রিয়া, বহুমূত্র,ঘাড়ে ব্যথা, মেরুদণ্ডে ব্যথা ইত্যাদি।
ড. জোসেফ মার্কোলা তার টোটাল হেলথ প্রোগ্রাম বইয়ে দেখিয়েছেন, প্রতিবছর শুধু আমেরিকাতেই স্ট্রেসঘটিত শারীরিক, মানসিক জটিলতার কারণে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
রোগ ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্যে প্রথম প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবন চেতনার পরিবর্তন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, শতকরা ৭০ ভাগ রোগের কারণই হচ্ছে মানসিক। অর্থাৎ কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনার মানসিক প্রতিক্রিয়াই ৭০ ভাগ রোগ সৃষ্টির কারণ। শতকরা ২০ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে ইনফেকশন, ভাইরাস আক্রমণ, ভুল খাদ্য গ্রহণ ও ব্যায়াম না করা। শতকরা ১০ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে দৈহিক আঘাত, ওষুধ ও অপারেশনের প্রতিক্রিয়া।
তাই শতকরা ৭০ ভাগ রোগই শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সুস্থ জীবনদৃষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে নিরাময় হতে পারে। অন্যান্য রোগ নিরাময়েও ওষুধ ও সার্জারির পাশাপাশি সুস্থ জীবনদৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এএইচ/কেআই