মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেলের জটলা যানজটের নতুন বিড়ম্বনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৪৭ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯ বুধবার
রাজধানীতে আয়ের সহজ উৎস হওয়ায় দিন দিন বেড়ে চলেছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা। ফলে ঢাকার ট্রাফিক মোড়গুলোর যানজটে যোগ হয়েছে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলের নতুন বিড়ম্বনা। যানজট-বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি করছে নিবন্ধিত ও নিবন্ধনের বাইরে থাকা ভাড়ায় চালিত এসব মোটরসাইকেল।
রাইডশেয়ারে চলা বা রাইডশেয়ার বাদ দিয়ে ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলগুলোকে বাড়তি ঝামেলা বলে মন্তব্য করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তিনি বলেন, আমাদের পরিবহন ব্যবস্থাপনাটি এমনিতেই বিশৃঙ্খলায় ভরা। গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার কারণে ট্রাফিক মোড়গুলোর কার্যকারিতা কিন্তু অনেকটা কমে এসেছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল। এগুলো যেখানে যাত্রী পাওয়া যায়, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। এতে একদিকে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যানজট দীর্ঘায়িত হচ্ছে, অন্যদিকে অ্যাপের বদলে চুক্তিতে চলায় যাত্রীর নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশে রাইডশেয়ারের অপব্যবহার হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, এখানে রাইডশেয়ার বেশি দিন চালু হয়নি। এটা মাত্র আরম্ভ হয়েছে। মানুষের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এখনই এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। এখনো সময় আছে। প্রথম থেকে এসব বিষয় নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। এ ঝামেলা গোড়াতেই যদি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে ঢাকার বিশৃঙ্খলা কোনোদিনই কমবে না, উল্টো বাড়বে।
সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এলাকায় সিগনালাইজড ইন্টারসেকশন আছে প্রায় ৭০টি। এর বাইরে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য মোড়, যেগুলোয় দিনভর লেগে থাকে যানজট।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, এখন পর্যন্ত অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ার সেবায় নিবন্ধন করেছে ১ লাখ ৮০৯টি মোটরসাইকেল। সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল রয়েছে সহজ রাইডের। প্রতিষ্ঠানটিতে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩০ হাজার ৮২২। একইভাবে ওভাইতে ২৬ হাজার ১১০, পাঠাওয়ে ২০ হাজার, উবারে ১১ হাজার ৭৮৪, পিকমিতে ৭ হাজার ৭০৭ ও চালাওয়ে নিবন্ধন আছে ৪ হাজার ৩৮৬টি মোটরসাইকেলের। তবে একজন চালক একই সঙ্গে একাধিক কোম্পানিতে যুক্ত থাকায় অ্যাপে সেবা দেয়া মোটরসাইকেলের প্রকৃত সংখ্যা এর কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।
এসব মোটরসাইকেলচালকের কারণে ঢাকায় শুধু বিশৃঙ্খলা-যানজটই বাড়ছে না, যাত্রী নিরাপত্তায়ও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাইডশেয়ার প্লাটফর্ম পাঠাও লিমিটেডে গত কয়েক মাসে এমন একাধিক অভিযোগ এসে জমা পড়েছে, ট্র্যাকিং রেকর্ড না থাকায় যেগুলোর কোনো সমাধান দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির কমিউনিকেশন ম্যানেজার সৈয়দা নাবিলা মাহবুব বলেন, অনেক রাইডার যে অ্যাপে না গিয়ে চুক্তিতে চলাচল করেন, সে বিষয়ে আমরা অবগত। বিয়ষটি যে ঠিক নয়, নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করে, বিশৃঙ্খলা বাড়ায়, তা নিয়ে আমরা চালক ও যাত্রীদের নিয়মিত সেলফোনে এসএমএস দিয়ে থাকি। অ্যাপে না গিয়ে চুক্তিতে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসার ওপর যতটা প্রভাব পড়ছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব কিন্তু পড়ছে যাত্রীদের নিরাপত্তার ওপর। প্রায়ই অনেক যাত্রী আমাদের কাছে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ নিয়ে আসেন। কিন্তু চুক্তিতে যাওয়ায় চালকের কোনো রেকর্ড আমাদের হাতে থাকে না। তাই আমরা কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারি না।
পাঠাও চালকদের সচেতন করতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু চালকদের ওপরই দায় চাপালে হবে না, যারা রাইড ব্যবহার করেন, তারাও কিন্তু দায়ী। তারা যদি অ্যাপের বদলে চুক্তিতে না যাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকেন, তাহলে কিন্তু বিষয়টা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব।
আরকে//