আদালতে মিন্নির আকুতি `স্বামীর খুনীর ফাঁসি চাই`
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:২৪ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৩৫ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯ বুধবার
বরগুনায় সময়ের আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর স্বাক্ষী ও হত্যকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এসময় আদালতের বিচারকের এক প্রশ্নে নিজেকে নিরাপরাধ দাবি করে স্বামীর খুনীদের ফাঁসি চান মিন্নি।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকাল ৩টায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে সে আবেদনের প্রেক্ষিতে মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিকেল তিনটার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে আসা হয় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের বিচারকের কাছে মিন্নিকে কি কি কারণে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয়েছে সেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।
এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা মিন্নির সঙ্গে মামলার আসামিদের কল লিস্ট, বিভিন্ন সময় অবাধ যোগাযোগ, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয় ও এজাহারভুক্ত আসামি টিকটক হৃদয়ের স্বীকারোক্তির তথ্যাধি আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালতের বিচারকের কাছে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই সংশ্লিষ্টতার বিষয়সহ মামলার রহস্য উদঘাটন ও অধিকতর তদন্তের জন্য মিন্নিকে সাত দিনের রিমান্ডে দেয়ার আবেদন করেন।
এসময় আদালতে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কৌশলী অ্যাড. সঞ্জিব দাস বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে উপস্থাপন করেন রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি টিকটক হৃদয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রিফাত হত্যাকান্ডে পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিন্নি জড়িত ছিলো। এই হত্যাকান্ডের পূর্বে এজাহারভুক্ত সকল আসামিদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করেছে সেই কল লিস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন, এসময় আদালতের কাছে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক মিন্নির পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকায় মিন্নিকেই কথা বলার সুযোগ দেন। আদালতের বিচারক মিন্নিকে প্রশ্ন করেন, এই মামলায় আপনার কোন কৌশলী না থাকায় আপনার বক্তব্য কি?
এসময় মিন্নি বলেন, রিফাত শরীফ আমার স্বামী। আমি আমার স্বামী হত্যার সাথে জড়িত না। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমি এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত না, আমাকে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
এজাহারভুক্ত আসামিদের সঙ্গে আগে থেকেই আপনার যোগাযোগ ছিলো এবং আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সম্পর্ক ছিলো সে বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর ছিলেন মিন্নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে রিফাত হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছি। এই হত্যাকান্ডে মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা মিন্নিকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, রিফাত হত্যা মামলা দেশ ব্যাপি একটি আলোচিত হত্যা মামলা। এ মামলায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ দিন মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা তাকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
কি কি কারণে বা কোন কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মিন্নিকে এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তদন্তের স্বার্থে কিছুই বলেননি।
এদিকে বহুল আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত ১০ জন আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এনএস/এসি