ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

নুসরাতের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৯:৫৬ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯ বুধবার

‘মা দাখিলেতো (এসএসসি) আমি ৪.৯০ পেয়েছি, আলিমেও ইনশাআল্লাহ ভালো রেজাল্ট করলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।’ এমন বাক্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের স্বপ্নের কথা মাকে জানিয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। কিন্তু রাফির এই স্বপ্ন আর কোন দিন বাস্তবে রূপ নিবে না। অধরাই থেকে যাবে তাঁর স্বপ্ন। নিজের প্রতি হাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাফি এখন করুণ এক ইতিহাসের নাম।

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বরর্বরোচিত লালসার শিকার হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রশাসন ও স্থানীয় কতিপয় নেতার যোগসাজসে তাঁর সেই প্রতিবাদ তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। কেরোসিনের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় দেশের এই তরুণ স্বপ্নবাজকে।

নুসরাত আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। এ বছরের আলিমে একটা কোর্সের পরীক্ষায়ই তিনি অংশ নিয়েছিলেন। কুরআন মাজিদ নামের এই কোর্সে তিনি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। ফলাফল প্রকাশের পর নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অঝোরে কাঁদছেন নুসরাতের মা।

আহজারি করে বলছেন, ‘আমার মেয়ে অনেক মেধাবী ছাত্রী ছিলো, স্বপ্ন ছিলো অনেক বড় হবে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দিলো না। তারা আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে।’ তিনি তার মেয়ের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেন।

নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘নুসরাতের সহপাঠীদের অনেকেই আমাকে ফোন দিয়েছে, তারা ভালো ফলাফল করেছে, তাদের বাড়িতে আনন্দের আবহ। কিন্তু আমাদের বাড়ি শোকার্ত। আমার বোনও পরীক্ষা দিলো অনেক ভালো ফলাফল করতে পারতো।’

উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে রাফির মা চলতি বছরের ২৭ মার্চ স্থানীয় থানায় অভিযোগ করেন।  ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত। এ সময় কৌশলে তাকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে সিরাজ উদ দৌলার অনুসারীরা তার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়।

এতে রাফি অস্বীকৃতি জানালে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাত মারা যান। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া এক হত্যাকারী স্বীকার করে যে, এর আগে নুসরাত কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং পূর্ব রাগের জের ধরে সেও এই হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নেয়। সে ক্ষোভে ২০১৬ সালে নুসরাতের চোখে চুন জাতীয় দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে মেরেছিল।

এমএস/এসি