প্রভাবশালীদের হুমকিতেই আইনজীবী পাননি মিন্নি!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯ বুধবার
বরগুনায় বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য মামলার এক নম্বর স্বাক্ষী ও হত্যকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। এসময় আদালতের বিচারকের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হন মিন্নি। এর একটির জবাবে নিজেকে নিরাপরাধ দাবি করে স্বামীর খুনীদের ফাঁসি চান মিন্নি।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
এসময় আদালতে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। কারণ স্থানীয় এমপিপুত্র অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের হুমকি! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমপিপুত্র আগেই স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন, খুনিদের পক্ষে আইনজীবীরা মামলা চালাবেন না। মূলত এই হুমকিমূলক স্ট্যাটাসের কারণেই কোন আইনজীবীই আদালতে মিন্নির পক্ষে দাঁড়ায়নি বা দাঁড়াতে সাহস করেনি।
এ বিষয়ে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন বিবিসিকে দেওয়া তার এক বক্তব্যে বলেন, বুধবার সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একজন আইনজীবী পাননি। তিনি বলেন, 'যারা আসামি, তাদের বাঁচানোর জন্য এখন এগুলা করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, যার স্বামীকে মারা হলও, তাকে (রিফাত শরীফ) বাঁচানোর জন্য কী চেষ্টা আমার মেয়ে করছে, সবাই দেখছেন আপনারা, সেই এক নম্বর সাক্ষী আজ কাঠগড়ায়। এমনকি আজ আমার মেয়ের পক্ষে কোন উকিলও (আইনজীবী) দিতে পারিনি। কেউ যাতে তার জন্য কোর্টে না দাঁড়ায়, সেজন্য বারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি।"
কারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মিন্নির বাবা বলেছেন, "এলাকার প্রভাবশালী লোকেরা ছাড়া কারা এ কথা বলতে পারে, আপনারা বুঝে নেন। আমি বলতে গেলে কী আমি দেশে থাকতে পারবো?"
এদিকে আদালতে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কৌশলী অ্যাড. সঞ্জিব দাস বলেন, আদালতের কাছে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক মিন্নির পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকায় মিন্নিকেই কথা বলার সুযোগ দেন।
আদালতের বিচারক মিন্নিকে প্রশ্ন করেন, এই মামলায় আপনার কোন কৌশলী না থাকায় আপনার বক্তব্য কি?
এসময় মিন্নি বলেন, রিফাত শরীফ আমার স্বামী। আমি আমার স্বামী হত্যার সঙ্গে জড়িত না। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমি এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত না, আমাকে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আমি স্বামীর খুনিদের ফাঁসি চাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, রিফাত হত্যা মামলা দেশ ব্যাপি একটি আলোচিত হত্যা মামলা। এ মামলায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ দিন মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা তাকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে রিফাত হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছি। মিন্নির সঙ্গে মামলার আসামিদের যোগাযোগ, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয় ও এজাহারভুক্ত আসামি টিকটক হৃদয়ের স্বীকারোক্তিমূলক তথ্যাদি আমাদের হাতে রয়েছে। যেগুলো হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে।
তিনি আরও বলেন, এসব সংশ্লিষ্টতার বিষয়সহ মামলার রহস্য উদঘাটন ও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আমরা মিন্নিকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে বহুল আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত ১০ জন আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এনএস/এসি