মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী, ফেসবুকে নিন্দার ঝড়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:১১ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:১২ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মিন্নিকে গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার আদালতে নেয়া হলে তার পক্ষে কোনও আইনজীবী লড়তে রাজী হননি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য ও প্রশ্ন রেখে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিভিন্ন জন। রাজনীতিক ও অধিকার কর্মী তাহেরা বেগম জলি তার ওয়ালে লিখেছেন—
একজন আইনজীবী পাওয়ার অধিকারও মিন্নির নেই?
‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কতিপয় দুর্বৃত্ত মিন্নিকে নিয়ে কুৎসিত প্রচারে মেতে উঠেছে। যা শত নারী ধর্ষণের সমান। আমরাও যখন এখানে মিন্নির ব্যাপারে স্বচ্ছতার দাবি তুলছি, তখনও দুই একজন ভদ্রলোক (!) বিকৃত নোংরা পদ্ধতিতে আমাদের সামনে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই সেদিনও যে অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে নিয়ে এমনই বীভৎস খেলায় মেতে উঠেছিল সিরাজ বাহিনী, তা আসলে মনে থাকে না। আমরা ভুলে যাই, কিছু নরপশু দেখতে অবিকল মানুষের মতোই। নুসরাতের বিরুদ্ধে ঘাতক নিজে ধর্ষক সিরাজের পক্ষে ব্যানার নিয়ে রাজপথ দখল করেছিল। অবিকল কিনা জানি না, তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি মিন্নির বিরুদ্ধেও কিছু অভিজাত দুর্বৃত্ত একইভাবে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নুসরাতের বিরুদ্ধে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপারের ভূমিকা আমরা সকলেই জানি। ঠিক একই নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে বরগুনাতেও। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! সেই ধর্ষক নুসরাত হত্যাকারী সিরাজের জন্য উকিলসমাজ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ধর্ষণের সাফাই গাইছে। আমরা তবে কোথায় যাবো। তবুও সমগ্র নারী জাতির যা হয় হবে। কিন্তু যারা বাবা মা? তারা একটু ভাববেন না? এমন অসংখ্য উকিল তো আছেন, যারা কন্যা সন্তানের জনক জননী। অন্তত তারা কেন দাঁড়াবেন না মিন্নির পাশে। আমি জানি না, বা এ পর্যন্ত বলিনি মিন্নি প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু এটুকু আমরা কেন দাবি করবো না, মিন্নি আর ১০ জনের মতোই বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। মিন্নিকে নিয়ে যা ঘটছে, তাতে এই দাঁড়াচ্ছে, ওকে নিয়ে যা খুশি তাই করা যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের এক পরিচিত সম্ভ্রান্ত নারীকে খানসেনারা দড়ি দিয়ে ট্রাকের পেছনে বেঁধে গোটা মাগুরা শহর টেনে নিয়ে বেড়িয়ে এক সময় মৃত রক্তাক্ত ওই নারীকে নদীর ধারে ফেলে দেয়। আমাদের দেশের নারীদের নিয়ে খানসেনা এবং রাজাকারের সেই বীভৎস উল্লাস কি আজও বন্ধ হবে না? তা না হলে মিন্নির জন্য বরগুনার একজন আইনজীবীরও কেন মনে হলো না, কাউকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা মস্তবড় অন্যায়। মিন্নিকে বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে যে নির্মমভাবে বঞ্চিত করা হলো, এটা স্বাধীন দেশের একটা কালো অধ্যায়!’
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির স্ট্যাটাস, ‘মিন্নির পক্ষে স্থানীয় কোন আইনজীবী লড়তে চাচ্ছে না কারণ হিসেবে তারা বলছে, এতে তারা বিতর্কিত হবে। আচ্ছা, মিন্নি কি একজন স্বীকৃত ধর্ষক? কিন্তু স্বীকৃত ধর্ষকের পক্ষেও তো আইনজীবীরা লড়তে কুণ্ঠবোধ করে না। আহা দুনিয়া!’
সাংবাদিক রাজীব নূর তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘মেয়েটার পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়ালেন না। অথচ মিন্নির বাবা তার মেয়ের জন্য জিয়া উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা কাদের ও গোলাম সরোয়ার নাসির নামে তিনজন আইনজীবীকে নিয়োগ করেছিলেন। তারা আদালতে দাঁড়াতে না পারার ব্যাখ্যা হিসেবে ওকালাতনামায় স্বাক্ষর নিতে না পারার অজুহাত দেখিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আদালতে বিচারক মিন্নির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তার পক্ষে কোনও আইনজীবী রয়েছেন কি না? আমি আমার আইনজীবী বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে নিশ্চিত হয়েছি, তখন চাইলেই ওই তিনজন অনায়াসে নিজেদের মিন্নির পক্ষভুক্ত করে নিতে পারতেন। কেন তারা তা করেননি অনুমান করা কঠিন নয়। আমি বলছি না মিন্নি নির্দোষ। এমনটা দাবি করার কোনও সুযোগ আমার নেই। তবে মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করা গেলে কার লাভ, সেটা আরো অনেকের মতো আমিও বুঝতে পারছি। মিন্নির বাবা ওর রিমান্ড শুনানির সময় কোর্টের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন এবং কাঁদছিলেন বলে বরগুনার এক সাংবাদিক বন্ধু বিকালেই জানিয়েছিলেন আমাকে। কার ভয়ে?’
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।