নুসরাত আর মিন্নির ঘটনার কী অসাধারণ মিল
শওগাত আলী সাগর
প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:০৪ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার
সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রিফাত হত্যাকাণ্ড। নানা আলোচনা আর সমালোচনার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে এ হত্যাকান্ডের তদন্ত কাজ।
ইতিমধ্যে এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ মামলার প্রধান সাক্ষী রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেফতার করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে মিন্নিকে।
ফলে বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। আসলে কোনদিকে মোড় নিচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত।
এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তেমনই কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর এ হত্যাকাণ্ড ও তদন্ত নিয়ে তুলে ধরেছেন তার নিজস্ব মতামত। একুশে টেলিভিশন পাঠকদের জন্য তার মতামতটি তুলে ধরা হলো-
‘আমি হস্তক্ষেপ না করলে তো মেয়েটাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হতো’ ফেনীর নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পর এ মন্তব্য করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নুসরাতকে চরিত্রহীন বানানোর চেষ্টা শুরু করা হয়েছিল। ঘটনার পরবর্তী অধ্যায়গুলোর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকান, ফেনী আর বরগুনা, নুসরাত আর মিন্নির ঘটনার মধ্যে কি অসাধারণ মিল আছে। ফেনীতে ছিল ওসি মোয়াজ্জেম, বরগুনায় ওসি আবির। ফেনীতেও মিছিল মানববন্ধন হয়েছে, বরগুনায়ও। ফেনীতেও এমপি, চেয়ারম্যানের নাম এসেছে, বরগুনায়ও এমপি, চেয়ারম্যানের নাম আছে।
ফেনীতে নুসরাতের মৃত্যু ঘটার পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বরগুনায় মিন্নি মরেনি, প্রধানমন্ত্রী এখনো হস্তক্ষেপ করেননি। ফলে মিন্নিকে চরিত্রহীন বানানোর, তাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গডফাদারদের বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি জানি, আপনারা মিন্নি আর নয়নের তথাকথিত ‘সেক্স ভিডিও’র কথা বলবেন।
ভিডিওটা যারা দেখেছেন, তারা দয়া করে নিজের যৌন সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে দেখেন তো? কি? স্বাভাবিক মনে হয়? আচ্ছা, এই ভিডিওটা কারা ছড়ালো? কোথায় পাওয়া গেছে এ ভিডিও? নয়নের সেল ফোনে ছিল? পুলিশের তথাকথিত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর সেটি পুলিশের হাতে পড়েছে? তা হলে তো সেটি তদন্তের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা? পুলিশের সেটি আদালতে উপস্থাপন করার কথা?
সেটি বাইরে ভাইরাল হলো কিভাবে? পুলিশ কি সেটি ছড়িয়ে দিয়েছে? না কি এটি গ্রেফতার হওয়া নয়নের সহযোগীদের কাছে ছিল? তা হলে তো একই প্রশ্ন ওঠে? এই ভিডিওটা কারা ছড়ালো? আমি তো মনে করি, তাদেরই বরং আইনের আওতায় আনা দরকার।
দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর কথাই কিভাবে অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায়। তিনি ‘হস্তক্ষেপ না করলে’ কিভাবে একটি নারীকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হয়!
মিন্নি দোষী কি না, রিফাত হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না। সেটা তদন্তের এবং আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের বিষয়। কিন্তু তাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া, যেমন নুসরাতকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, এ অভিন্ন চক্র কিভাবে তৈরি হলো?
তিনি কায়েস আহমেদ বকুল নামে একজনকে উল্লেখ করে লিখেন তাঁর (কায়েস) ব্যাখ্যাটি ভালো লেগেছে। এখানে সাগর লেখেন, আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে মিন্নি গ্রেফতার কেন হয়েছে, তার চরিত্রহীনতার কারণে নাকি খুনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে?
রিফাত শরীফ বেঁচে নেই, তার বক্তব্য জানার সুযোগ নেই তবুও কেবল আপনার বিবেককে প্রশ্ন করার অনুরোধ করছি, আপনার কী মনে হয় এতো ছোট একটি শহরে থেকেও রিফাত নয়ন মিন্নির বিয়ে বা প্রেমের কথা না জেনে মিন্নিকে বিয়ে করে ফেলেছে? সে নিশ্চয়ই সব জেনে এবং নয়নের খপ্পর থেকে বাঁচাতে পারার নিশ্চয়তা দিয়েই মিন্নিকে বিয়ে করেছে ধারণা করছি! এর এই জন্যেই হয়তো সে কলেজে মিন্নিকে নিতে ও দিতে আসত!
পনের মিনিট কথা বলার বা বাসায় গিয়ে দেখা করার যে কথাগুলো আসছে তা যদি সত্য হয় বা ধরে নিলাম সত্য তবে যে নয়নকে তালাক দিলো বা যার সাথে ব্রেকআপ করলো তার সাথে কেন যোগাযোগ করছে? এই প্রশ্নটির জবাব পাবেন আপনাদের তথাকথিত ভিডিওতে যেটা দিয়ে মিন্নিকে খুনি প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে! ঐ ভিডিওটি খেয়াল করে দেখুন স্বামী স্ত্রী মোটরসাইকেলের দিকে যেতে যেতে মিন্নি হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়, কেন দাঁড়ায়, কারণ সে জানতো হয়তো নয়নের দল তার স্বামীর উপর আক্রমণ করবে তাই অদূরে তাদেরকে দেখে স্বামীকে কিছু একটা বলে তাকে নিয়ে কলেজ আঙিনায় নিরাপদে যেতে চায় সে, তারা দুজন কলেজের দিকেই ফিরে যায় বা যেতে চায় কিন্তু পারে না তার আগেই আক্রান্ত হয় রিফাত!
এখন কি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে কেন ১৫ মিনিট কথা বলেছিল বা বাসায় গিয়েছিল? রিফাতকে নিয়ে যাবার সময়ের মিন্নির রিয়েকশন অর্থাৎ তার ধীরগতিতে যাওয়াটা ভিডিও এডিট যে কারণে রিফাতকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটাও অত্যন্ত ধীর কিন্তু একই ভিডিওতে যখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও এডিট করে অ্যাড করা হয়েছে তার সকল দৃশ্য বা মিন্নির রিয়েকশন ও স্বাভাবিক!!
কথিত ভিডিওটি পরিকল্পিতভাবে এডিট করে ছাড়া এবং নিজেদের লোক দিয়ে ভিডিও এনাইলাইস করা মূলত মূল আসামিদের অর্থাৎ ফরায়েজী পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ করে মিন্নির দিকে ফোকাস নিয়ে আসে! ক্ষমতার এ ক্ষেত্রে খুনিরা সফল! ভাই ১৫ মিনিটে ফোনালাপে খুনের পরিকল্পনা তাকলে এমপি পুত্রের দালাল পুলিশরা ফোনালাপের অডিও সবাই আগে সামনে নিয়ে আসতো!
মিন্নি আগেই বিবাহিত বা নয়নের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল জেনেই যারা তাঁকে অপরাধী মেনে নিয়েছেন তাদের কাছে বিনীত অনুরোধে তার সে অপরাধের জন্য তাকে খুনি সাব্যস্ত করবেন না, মিন্নির মত অপরাধী (আপনাদের মতে) ঘরে ঘরে আছেন! কিন্তু রিফাতের খুনিরা হাতে গোনা মাত্র, ওদের নিশ্চিহ্ন করতে ঐক্যবদ্ধ হন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কানাডা প্রবাসী।
এমএস/