ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

নিরাপত্তার শঙ্কায় মিন্নির পরিবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৫ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১০:১৫ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে শাহ নেওয়াজ শরিফ রিফাত হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী প্রধান সাক্ষী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গ্রেফতারের পরে রিমান্ডে রয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারের পরে তাকে বুধবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে মিন্নির জন্য কোন আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। তার পক্ষে যেন কোন আইনজীবী আদালতে না আসেন এ জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা আইনজীবীদের হুমকি দিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। 

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেনের অভিযোগ, প্রতিপক্ষের ভয়ে আইনজীবীরা মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি। প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে রয়েছে তার পরিবার। তাদের ভয়ে কেউ মিন্নির পক্ষে মুখ খুলছেন না।

মিন্নির বাবা তার মেয়ের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য তিন জন আইনজীবীকে অনুরোধ করলেও মিন্নির প্রতিপক্ষের ভয়ে আইনজীবীরা আদালতে মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন। 

মিন্নির বাবা আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে আমার মেয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার নাসির ও অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদেরের দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে তারা দাঁড়াননি আমি বলতে পারব না। তবে ধারণা করছি, প্রতিপক্ষের ভয়ে হয়তো কোনো আইনজীবীরা দাঁড়াননি।’

এ বিষয়ে আইনজীবী জিয়াউদ্দিন জানান, মিন্নির বাবা তার কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছেন, তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি। তাই তিনি আদালতে দাঁড়াতে পারেননি। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি। কী ধরনের কাগজপত্র লাগবে, তা তিনি জানেন না এবং তাকে পরামর্শ দিলে সেভাবে কাজ করতেন বলে দাবি করেন মিন্নির বাবা।

নিরাপত্তার শঙ্কার কারনে মিন্নির ছোট দুই ভাই স্কুলে যেতে পারছে না।  মিন্নিকে গ্রেফতারের আগে তার বাড়িতে পুলিশের পাহারা থাকলেও এখন পাহারা উঠিয়ে নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। 

মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন যে, মেয়ের জামাইকে হত্যার পর তার বাড়ির আশপাশে কিছু অপরিচিত মানুষ ঘুরঘুর করছে। এতে রাতে অন্ধকারে তাকে মেরে ফেলার শঙ্কার কথা জানান তিনি। মোজাম্মেলের দাবি, প্রভাবশালীদের চোখ রাঙানিতে তার পাশে কেউ নেই।

এদিকে আজ শুক্রবার মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। এ সময় তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, তাঁর মেয়ে অসুস্থ, গতকাল রাতে একজন পুলিশ সদস্য তাঁর বাসায় গিয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়ে এসেছেন। আজকে জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করে তাঁর মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

মোজ্জাম্মেল হোসেন আরও বলেন, ‘মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমাদের বলি দেওয়া হচ্ছে।’

মিন্নিকে যখন আদালত থেকে বের করা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁকে পুলিশের দুজন নারী সদস্য ধরে ছিলেন। ছোট পিকআপে তোলার সময় মিন্নি কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্য এ সময় মিন্নির মুখ চেপে ধরেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে শাহ নেওয়াজ শরীফ রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে ঐ দিন বিকেলে বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শরীফ। 

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

এদিকে মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

এমএস/এসি