মহাকবি কায়কোবাদের অরক্ষিত জমি দখল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫৫ পিএম, ২১ জুলাই ২০১৯ রবিবার
১৯৫১ সালের ২১ জুলাই পরলোকগমন করেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মহাকবি কায়কোবাদ। আজ মহাকবির’র প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য সারাদেশের মানুষের কাছে কবি সমাদৃত হলেও তার জন্মভূমিতেই এখন অবহেলিত তিনি।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে ১৮৫৭ সালে ২৫ ফেরুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মহাকবি কায়কোবাদ। তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। তার পিতা ঢাকা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবি শাহামাতুল্লাহ আল কোরাশী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশ হলে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৯০৪ সালে তার মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ প্রকাশ হলে তিনি মহাকবি উপাধি লাভ করেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন আগলা ডাকঘরে চাকুরী করেছেন।
মহাকবির বাড়ীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজ গ্রামে কবির স্মৃতিচিহ্ন বলতে তেমন কোন কিছু এখন আর অবশিষ্ট নেই। এখন মহাকবির ব্যবহ্নত একটি অরক্ষিত ঘর ও একটি আম গাছ ছাড়া আর কিছুই নেই। এ দুটিই যেন কবির স্মৃতি বহন করছে। কবির বাড়ীতে যারা বসবাস করছেন তারা কবির বিষয়ে তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
তবে রান্না কাজে ব্যস্ত একজন গৃহিনী বলেন, ‘কবির কোনো চিহ্ন এখন আর ঐ বাড়ীতে নেই।’
কবির বংশধররা সম্পূর্ণ জমি বিক্রি করে চলে গেছেন বলে তিনি দাবি করেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কবির বংশধররা কিছু জমি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশিরা সম্পূর্ণ জমিই দখল করে নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে কবির বাড়ির সামনের রাস্তাটি কবির নামে নামকরন করে একটি ফলক নির্মাণ করা হলেও তা রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলে। ফলে রাস্তাটি যে তার নামে নামকরণ করা হয়েছে তা অনেকেই জানেন না। ১৯৭২ সালে সাবেক সংসদ সদস্য সুবিদ আলী খান কায়কোবাদের সম্মনার্থে তার কর্মস্থল আগলা ডাকঘর সংলগ্ন জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
এ ছাড়া কবির বাড়ির পশ্চিমে ১৯৮৩ সালে আগলা মাছপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় কায়কোবাদ যুব ক্লাব ও গণপাঠাগার। গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে পাঠাগারটির সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোন দর্শনার্থী আগলা গ্রামে গেলে কবি সর্ম্পকে কিছুই জানতে পারেন না। পাঠাগারটি পূনরায় চালু করার ব্যাপারে কয়েকবার উদ্যোগের কথা বলা হলেও স্থানীয়দের মধ্যে জটিলতা থাকায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার চৌরাস্তায় কায়কোবাদের নামে গোল চত্বর নির্মান করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চত্বরটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা চত্বর স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে চত্বরটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানালেও কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহাকবি শুধূ আগলা না নবাবগঞ্জের গর্ব। তবে আমরা তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করতে পারি না। কবির সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম কিছুই জানে না। নিজ ভূমিতেই কবি আজ অবহেলিত।
কায়কোবাদের নাতি টুটুল আলম কোরেশী বলেন, ‘কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে কবির নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হলে তার সর্ম্পকে নতুন প্রজম্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।’ কবির বাড়ির সামনে মসজিদের আযান শুনে আযান কবিতাটি লিখেছিলেন বলেও জানান তিনি। বাংলা ১৩০০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন জমিদার মজিদ মিয়া।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা কাজল চৌধুরী বলেন, ‘এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন কবি কায়কোবাদ।’
এমএস/