1. প্রচ্ছদ
2. আন্তর্জাতিক

নিজেকে স্বামী পরিচয় দিয়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন এক যুবক। শিশুর জন্মের পর স্বভাবতই হাসপাতালের কর্মী থেকে চিকিৎসকরা সবাই ওই যুবককেই বাবা হিসাবে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু একদিন পর এসে সদ্যোজাত শিশুর পিতৃত্ব দাবি করেন আরেক যুবক। 

এতে অবস্থা যখন চরমে তখন আরও এক যুবক এসে দাবি করে বসলেন, তিনিই ওই শিশুর বাবা! তিন দিনে আসা তিন বাবাকে নিয়ে হিমশিম খাওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শেষে হলেন পুলিশের দ্বারস্থ।

সম্প্রতি এমনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায়। ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। দীপঙ্কর পাল নামে এক যুবক স্বপ্না মিত্র নামে ওই সন্তানসম্ভবাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে ভর্তি করেন গাঙ্গুলিবাগানের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে। সন্তানসম্ভবা ওই মহিলা রোববার তাঁর সন্তানের জন্ম দেন। মহিলার সঙ্গে এক জন প্রৌঢ়াও ছিলেন যিনি নিজেকে স্বপ্নার মা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, সন্তানের জন্ম পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু রোববার বিকেলে হঠাৎই অন্য এক যুবক হাসপাতালে গিয়ে ওই সদ্যোজাতকে দেখতে চান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনিও নিজেকে ওই শিশুর বাবা বলে পরিচয় দেন। শুনে হকচকিয়ে যান হাসপাতালের কর্মীরা। তাঁরা ওই যুবককে ঢুকতে না দিয়ে পুলিশে খবর দেন। পাশাপাশি গণ্ডগোলের আশঙ্কা থেকে মহিলার কেবিনের সামনে হাসপাতালের দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে মোতায়েন করেন।

পুলিশ এসে দুই যুবকেরই পরিচয় জানতে চায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরে আসা যুবক নিজের নাম হর্ষ ক্ষেত্রী বলে জানিয়েছেন পুলিশকে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি নিউটাউনে। প্রথম ব্যক্তি, অর্থাৎ দীপঙ্কর পুলিশের সামনে নিজের বিয়ের কাগজপত্রও দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

অন্যদিকে দ্বিতীয় ব্যক্তিও পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনিও বিয়ের সার্টিফিকেট দেখাতে পারবেন। কিন্তু, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রহস্য বাড়িয়েছে ওই মহিলার ভূমিকা। 

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচার করে ওই মহিলার শিশুর জন্ম হয়েছে। মহিলাকে শিশুর বাবা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেও তাঁর বয়ান নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে পুলিশ এখনও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। মহিলার মা বলে পরিচয় দেয়া বৃদ্ধাও গোটা রহস্যে কোনও আলোকপাত করতে পারেননি। 

এরই মধ্যে ফের রহস্য বাড়িয়েছেন তৃতীয় এক যুবক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমবার বিকেলে প্রদীপ রায় নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে আসেন। তিনিও নিজেকে শিশুর বাবা বলে দাবি করেন। সব মিলিয়ে বেশ যন্ত্রণার মধ্যেই আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিন জন দাবিদারকে দেখে আর্থিক ভাবে যথেষ্ট সঙ্গতি সম্পন্নই মনে হয়েছে। ওই শিশুকন্যার দাবি নিয়ে তিন-তিন জন হাসপাতালে হাজির হওয়ার পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

ডিসি (সাউথ সাবার্বান) সুদীপ সরকার জানিয়েছেন, হর্ষ ক্ষেত্রী নামে এক ব্যক্তি দীপঙ্কর পাল ও প্রদীপ রায় নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ওই দু’জন ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে তাঁর সন্তানের পিতৃত্বের অধিকার চাইছে। তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, গোটা রহস্যের চাবিকাঠি রয়েছে শিশুর মায়ের কাছে। তাঁকে জেরা না করা পর্যন্ত পরিষ্কার হবে না, শিশুর আসল বাবা কে?

সূত্র: আনন্দবাজার।

এনএস/এসি