দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমজমাট ভাসমান পেয়ারা বাজার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩১ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪০ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
দেশ বিদেশের হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে ওঠেছে ঝালকাঠির ভীমরুলী গ্রামের নৌকায় ভাসমান পেয়ারা বাজার। শুধু কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য নয়, ভ্রমণের জন্যও আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে ওঠেছে সদর উপজেলার কির্ত্তিপাশা ইউনিয়নের এই গ্রামটি।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই এলাকা হয়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ।
স্থানীয়রা জানায়, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার সীমান্তে ৫৫ গ্রাম জুড়ে বিস্তৃত বাগানে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়।
আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ভরা মৌসুমে জমে উঠে ভীমরুলী খালে ভাসমান পেয়ারার হাট। এসময় পাকা পেয়ারার মৌ-মৌ গন্ধ নিতে এবং সবুজের সমারোহ দেখতে আসে দেশ ও বিদেশের বহু মানুষ।
প্রথমবারের মতো কেউ ঘুরতে গেলে মনে করতে পারেন, এটা স্থানীয় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার অংশগ্রহণে হয়তোবা কোন নৌকা বাইচ। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই বোঝা যাবে যে না এটি কোনো প্রতিযোগিতা নয়। বরং জলেভাসা পেয়ারার বাজার ধরতে চারদিক থেকে দিকে ছুটে আসা শত শত ডিংগি নৌকার সারি।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এ জলবাজারে প্রধান পণ্য পেয়ারা। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় পণ্য নিয়ে শুরু হয় বিকিকিনি। সারি সারি নৌকার ওপর সবুজ-হলুদ পেয়ারা। হাটুরেদের হাঁকডাকে গরম থাকে পুরো এলাকা। এক কথায় খালের ওপর এ এক আজব-অবাক করা বাজার।
স্থানীয়রা জানায়, এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট এটি। যা পুরো বাংলাদেশেই অনন্য। দক্ষিণাঞ্চলের পেয়ারা বাগান ও ভাসমান পেয়ারাহাট হিসেবে ভীমরুলী বিখ্যাত। খালের দু’পাশে ব্যবসায়ীদের আড়ৎ। বাংলাদেশের সিংহভাগ পেয়ারা উৎপাদনকারী অঞ্চলের চাষিরা ডিঙিতে বসে বিকিকিনিতে মগ্ন। প্রতিবছর শত বিদেশি পর্যটক এ স্থানে ভিড় জমান পুরো পেয়ারা মৌসুম জুড়েই। বাংলাদেশিদের জন্যও যা হতে পারে অপূর্ব ভ্রমণকেন্দ্র।
অন্যদিকে এর সঙ্গে মৌসুমের অপূর্ব এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, প্রবাসী ও বিদেশি অতিথিরাও আসেন উপভোগ করতে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অভাব ও নির্ধারিত কোন পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় ভ্রমণ পিপাসুরা পেয়ারা বাগানে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করে পেয়ারা নষ্ট ও ডালপালা ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে।
এদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হলেও পেয়ারা চাষীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাসহ পর্যটকদের ভ্রমণের আনন্দ দিতে স্থানীয় কিছু শিক্ষিত বেকার যুবকের উদ্যোগে একাধিক পার্ক গড়ে উঠেছে।
এ রকমই স্থানীয় একজন উদ্যোক্তা অনুপ হালদার জানায়, তিনি পৈত্রিক ৩ বিঘা সম্পত্তি নিয়ে লেকভিউ ইকোপার্ক কার্যক্রম শুরু করেন। তার এ লেকভিউ ইকোপার্ক ভীমরুলী জলে ভাসমান পেয়ারা হাটের মাত্র ৫০ গজ পূর্বে। এখানে ৬০-৭০ জন মানুষ নির্বিঘ্নে ঘুরে ভ্রমণ আনন্দ নিতে পারবে। স্বরুপকাঠির ইন্দিরহাট থেকে গোলপাতা এনে ৪টি কটেজ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সারি সারি বেঞ্চ ও টেবিল দেয়া থাকবে। ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পর্যটন কেন্দ্রের পূর্ণ রুপ দিতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান অনুপ হালদার।
ভীমরুলীতে ভাসমান এ পেয়ারা হাট পরিদর্শন করেন ২০১৮ সালে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। গত ১১ জুলাই পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের বিভিন্ন বড় বড় শহরে এমন জলে-ভাসা বাজারের দেখা মেলে। কিন্তু বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জলেভাসা বাজার-হাট গড়ে ওঠা সত্যিই অবাক করার মতো। তাও আবার জমজমাট হাট।
বাংলায় তিনি বলেন,এটি দেখতে সত্যিই চমৎকার! অদ্ভুত সুন্দর এই ভাসমান হাটটি। তার আশপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশ যে কতটা নজরকাড়া হতে পারে, এটি এখানে না এলে বোঝার উপায় নেই।
এনএম/কেআই