ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী হব ভাবিনি, মা চেয়েছিল সরকারি চাকরি করি: মোদি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই ছিল না! কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী হবেন। অল্প বয়সেই ছেড়েছিলেন পরিবার। দেশই ছিল তার মা-বাবা। বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ কথোপকথনে উঠে এল এমনই এক নরেন্দ্র মোদির জীবন সংগ্রাম।

মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফার পর অক্ষয় কুমারের টুইটার ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সিনেমার টিজারের ঢঙে যেভাবে ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ কথপোকথন বলে সাক্ষাৎকারের ছোট ছোট যে ক্লিপিং টুইটারে ছেড়েছিলেন অক্ষয়, তাতে মেজাজটা বোঝা গিয়েছিল। তার উপর ছিল বলিউডি উপস্থাপনার কৌশল। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ৭ লোককল্যাণ মার্গের বাড়ির বারান্দায় দু’জনের আড্ডা জমে উঠে। অক্ষয় কুমারের অনুরোধে আবার লনে হাঁটতে হাঁটতেও কথা হয়েছে দু’জনের। 

বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন, ভেবেছিলেন? মোদিকে প্রশ্নটা করেই ফেললেন অক্ষয়। জবাব দিলেন মোদি, ‘আমি কখনও ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী হব। সাধারণ মানুষ কখনও সেটা ভাবেও না। যে ধরনের পরিবার থেকে উঠে এসেছি, তাতে আমি একটা সরকারি চাকরি পেলেই আমার মা হয়তো লাড্ডু বিলি করে বেড়াতেন।’

পরিবার এবং তার নিজের অবস্থা বোঝাতে নিজেই উল্লেখ করেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রসঙ্গ। মোদি বলেছেন, ‘আমার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই ছিল না। আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন দেনা ব্যাঙ্কের লোকজন এসে একটি পিগি ব্যাঙ্ক দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে তেমন টাকা পয়সা ছিল না। পরে ব্যাঙ্কের লোকজনই এসে বলেন, আমার অ্যাকাউন্টে লেনদেন না হওয়ার জন্য সেটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ৩২ বছর পর ওরা আমাকে বলেছিল, ছোট বয়স থেকেই আমার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী হলাম (গুজরাতের) আমার মাইনে পড়ত ওই অ্যাকাউন্টে। ওদের বলেছিলাম, আমি ওই টাকা দান করতে চাই। ওরা বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা আছে, আমার দরকার হতে পারে। কিন্তু আমি তাদের জোর করে বলেছিলাম, ২১ লাখ টাকা আমি গরিবদের দান করতে চাই।’

আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো তিনি নন। বাড়ি ঘর, সংসার ছেড়েছেন কিশোর বয়সেই। কিন্তু কখনও কি মনে হয় না পরিবারের সঙ্গে, মা, ভাই-বোনের সঙ্গে থাকার কথা? মোদির জবাব, ‘আমি ছিলাম কার্যত পরিব্রাজক। আমি নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিলাম। যুবক বয়সেই আমি নিজের পথে চলেছি। সেটার থেকেই জন্ম হয়েছে একটা বিচ্ছিন্নতার। পরে যখন আমি মাকে বলেছি আমার সঙ্গে থাকতে, উনি গ্রামেই থাকতে চেয়েছেন। উল্টো দিকে আমি নিজেও মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাইনি।’

অর্থাৎ কার্যত সন্ন্যাস নিয়েছেন। কিন্তু তা বলেন মানুষের সহজাত অনুভুতিগুলো-আবেগগুলোও কি মরে গিয়েছে? কখনও কি রাগ হয় না, হলে কী করেন? প্রশ্ন শুনেই মোদি বললেন, আমি খুব সহজে রাগ করি না। যদিও এটা মানুষের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট। এটা এমন একটা আবেগ, যা নেগেটিভিটি ছড়ায়। 

‘যখন কেরিয়ার (রাজনৈতিক) শুরু করি, তখন থেকে কখনও রাগ প্রকাশ করিনি। আরও একটি গোপন কথা ফাঁস করেছেন মোদি। জানিয়েছেন, রাগ বা অন্য কোনও অনুভুতির আতিশয্য হলেই সেটা তিনি লিখে রাখেন। তার পর সেটা নিয়ে ভাবতে থাকেন। এটা আমার নিজের ভুল বুঝতে সাহায্য করে। তবে হ্যাঁ, ওটার পিছনে বেশি সময় দিই না। যে কোনও পরিস্থিতিতে এই ভাবেই প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো আমি নিজেকে তৈরি করে ফেলেছি।’ 

এই ফাঁকে রাগ হলে তিনি নিজে কী করেন, সেটাও জানিয়ে রাখলেন অক্ষয়। বললেন, ‘আমার বাড়িতে একটা বক্সিং ব্যাগ আছে। রাগ না কমা পর্যন্ত ওই ব্যাগে প্রচুর ঘুসি মারতে থাকি।’

সংসারত্যাগের ক্ষেত্রে আম জনতার অনেকের থেকেই আলাদা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা এখনকার সময়ে যে অসম্ভব, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মোদিও পারেন না। অক্ষয়কে বললেন, ‘টুইটার ফেসবুক পোস্টে যে সব মজা হয়, আমি সেগুলো উপভোগ করি। তবে ওগুলোর মধ্যে মোদিকে দেখি না। সৃজনশীলতা দেখি। আমি মনে করি, সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এখান থেকেই আমি দেশের মানুষের মনোভাব বুঝতে পারি।’

সূত্র: আনন্দবাজার

এনএম