বরিস জনসনকে নিয়ে যত বিতর্ক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন বরিস জনসন। সেই সুবাদে আজ বুধবার নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তিনি।
ব্রিটেনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনীতিক কে? এই প্রশ্নে ১০ জনের ৮ জনই হয়ত বলবেন- বরিস জনসন।
আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্রিটেনেও বরিস জনসন একজন বিভেদ সৃষ্টিকারী বলে পরিচিত। বিভিন্ন সময় উদ্ভট মন্তব্য করে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
বিশেষ করে আফ্রিকানদের নিয়ে তিনি মাঝেমধ্যে এমন সব মন্তব্য করতেন, যা সম্পূর্ণ বর্ণবাদী ও অশোভন। ২০০২ সালে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সদস্য থাকাকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তিনি তার বক্তব্যে কৃষ্ণাঙ্গদের অভিহিত করতে ‘তরমুজের মতো হাসি’, ‘পিক্কান্নিস’ (যুক্তরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত শব্দ) জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেন হরহামেশাই।
২০১৩ সালে মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়পড়য়া নারীদের নিয়ে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার নারীরা ভালো স্বামী পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান।’ এমন বক্তব্যে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।
২০১৫ সালে এক বক্তৃতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘নির্মম ও চিত্তাকর্ষক দৈত্য’ বলেন জনসন। ওই মন্তব্যের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছিল।
এর আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ নিয়ে মন্তব্য করে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি করেন। ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে বরিস জনসন বলেন, লিবিয়ার সির্তে শহরকে আমি দুবাইয়ের মতো বানাতে পারব। তবে তাদের (লিবিয়ার প্রশাসন) শুধু লাশগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
এছাড়া, সম্প্রতি বোরকা পরা নারীদের নিয়ে তার এক কটু মন্তব্যের পর তাকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসাবে অনেক গালমন্দ শুনতে হয়েছে।
শুধুই যে বিতর্কিত তাই নয়, অনেক দিক থেকে ব্যতিক্রমীও বটে। বাচনভঙ্গি, শব্দের ক্ষুরধার ব্যবহার, চাহনি, মজা করে কথা বলার অসামান্য ক্ষমতা, এলোমেলো চুল, ব্যক্তিগত জীবন - এসবের বিবেচনায় তিনি অন্য দশজন রাজনীতিকের থেকে আলাদা।
আর বিয়ে না করেই বসবাস করছেন তার থেকে প্রায় ২৫ বছরের বয়সে ছোট এক বান্ধবীর সঙ্গে। বরিস জনসন এবং ক্যারি সিমন্ডস হবেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের প্রথম অবিবাহিত দম্পতি।
এদিকে, থেরেসা মে সংকট সমাধানে ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বায়িত্ব এখন তার কাধে। সেটি পালনে তিনি কতটা সাফল্য দেখাতে পারেন তাই এখন দেখার বিষয়।
বরিস জনসন দলের প্রধান হওয়ায় তার নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এমন ব্রিটিশ মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ও শিক্ষামন্ত্রী ড্যামিয়ান হিন্ডস।
আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রয়োজনে কোনও চুক্তি ছাড়াই তিনি ব্রিটেনকে ইইউ জোট থেকে বের করে আনবেন- এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিটপন্থী শিবিরের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি।
কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে তার দল এবং পুরো ব্রিটিশ রাজনীতিতে যে বিভেদ, মতানৈক্য চলছে, তাতে অক্টোবরের মধ্যে তিনি তার দেশকে ইইউ থেকে বের করে আনতে পারবেন কি না- তা নিয়ে বিরাট সন্দেহ রয়েছে।
যদি না পারেন, বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ খুবই সংক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগামী বছর জুলাই মাসে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তা নিয়ে অনেক বাঘা বাঘা রাজনৈতিক বিশ্লেষকও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।