ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৭ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৩:২২ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে অন্দোলন অব্যাহত রেখেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত তিন ধরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা তাগিয়ে আন্দোলন করে আসলেও আজ বুধবার চতুর্থ দিনের মতো ভবনগুলোয় তালা ঝোলানোর চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও  আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু বিভাগে ক্লাস হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আগামীকাল বৃহস্পতিবারও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি ও জিএস সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানালেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাতে সাড়া দেননি।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্বদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “অধিভুক্তি বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন এবং যে অসহযোগ কর্মসূচি চলছে তা চলমান থাকবে।

“আমাদের দাবি যদি না মানা হয় এবং অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা বা অনাকাঙ্খিত কিছু করা হয় সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার সমুচিত জবাব দিবে।

এমন পরিস্থিতিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন প্রশ্নের জাবাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর একেএম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, উপাচার্য  চীন সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে আসার কথা রয়েছে। তিনি আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্ত ৭ কলেজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
সেতুমন্ত্রী বলেন, ৭ কলেজ অধিভুক্তির বিষয় শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, এই আন্দোলনের বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে আমরা জানিয়েছি। তিনি আসলে যৌক্তিক বাস্তবসম্মত বিষয়টি বিবেচনা করবেন। কিন্তু এর আগে তারা যেন রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে কষ্ট না দেয়,জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে। সেই ব্যাপারে তাদের অনুরোধ করছি, তারা যেন ধর্মঘটের পথ থেকে বিরত থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন কলেজের অধিভুক্তি নতুন কোনো বিষয় নয়। ব্রিটিশ আমলেও পূর্ব বাংলার কলেজগুলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও অনেক কলেজ সম্পৃক্ত ছিল। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় চলে যায়। কিন্তু সারা দেশের সব কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট অনেক বেড়ে যায়।

এ অবস্থায় কিছু সরকারি কলেজ আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এতে তাঁদের শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে। পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে ও তাঁরা আবার সেশনজটের মুখোমুখি হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রায়ই আন্দোলনে নামেন। শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ফলে নগরজুড়ে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। তাঁদের দাবি, তাঁরাও বর্ধিত হারে সেশনজটের কবলে পড়ছেন। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর তুলনায় তাঁরা পিছিয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই একটি সমাধান দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, সমস্যাটি ব্যবস্থাপনাগত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনায় সাতটি কলেজের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা সময়মতো নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায়ও ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তার পরও আমরা মনে করি, লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসূচি অচল করে দেওয়া এর সমাধান নয়। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও কিছু নিয়ম-কানুন ও বাধ্যবাধকতা আছে। তাই এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত। সেই সময়ের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে তাঁরা আবার আন্দোলনে যেতে পারবেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না করে তাঁরা সাত কলেজের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না। উভয় দিকে সমস্যা তৈরি না করে তাঁদের একটি সমাধানে আসতে হবে।

টিআর/