ব্যথায় রাতে ঘুম হয় না মিন্নির, হাঁটেন খুঁড়িয়ে (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৪৪ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৭:০০ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার
মিন্নি রাতে ঘুমাতে পারেন না। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন এবং খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বরগুনার চাঞ্চল্যকর শাহ নেওয়াজ শরীফ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যা মামলায় গ্রেফতার তার স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে জেলহাজতে দেখা করেছেন তার আইনজীবীরা।
আজ বুধবার দুপুরে বরগুনা জেলা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেন তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। এ সময় সঙ্গে ছিলেন অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান সোহাগ। মিন্নির সঙ্গে তাঁরা ১০ মিনিটের মতো কথা বলেছেন বলে জানান অ্যাডভোকেট মাহবুবুল।
তিনি জানান, মিন্নির পুরো শরীরে ব্যথা আছে। তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন মিন্নি।
জেল গেইটে এ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আরও বলেন, ‘মিন্নি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তাঁকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর শরীরে এখনও ব্যথা রয়েছে। মিন্নির চিকিৎসার দরকার হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে জেলার জানিয়েছেন।’
মিন্নির ওপর কী ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি জানান, মিন্নি তাদেরকে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে তিনি খুবই অসুস্থ।
জোর করে মিন্নির কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি মিন্নিকে কিছু আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে জেলা কারাগারে যাই।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মিন্নি যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা পুলিশ তাকে শিখিয়ে দিয়েছে। মিন্নি এখন নিজের সেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তাই তাকে আমি ঐ স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদনের প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিয়েছি।’
কারাগারে মিন্নি পড়াশোনা করতে চান বলে জানান তার আইনজীবী। এ বিষয়ে জেল সুপারের সঙ্গে কথাও হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জেল সুপার জানিয়েছেন মিন্নির বাবা এ বিষয়ে আবেদন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃস্টি হয়। এরপর ২৭ জুন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সন্দেহভাজন আরও চার পাঁচজন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়।
গত ২ জুলাই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে ১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বক্তব্য রেকর্ড করতে মিন্নিকে বরগুনা পুলিশলাইন্সে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ ১০ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার কিরে পুলিশ।
পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে তার কোন আইনজীবী সে দিন আদালতে ছিলেন না। এ দিন পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা মিন্নি স্বীকার করেছেন বলে রিমান্ডে নেওয়ার এক দিন পর জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
অন্যদিকে ২২ জুলাই মিন্নির চিকিৎসার আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিচারক তখন উল্লেখ করেন।
এ দিকে মিন্নিকে নিপীড়নের মাধ্যমে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
এমএস/এসি