ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনীতে নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত
সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৫৪ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার
সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনীতে নারী নিহতের ঘটনার পাঁচদিন পর তার পরিচয় সনাক্ত করেছে পুলিশ।মঙ্গলবার বিকেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত সালমা বেগম(৪০) নামে ওই নারী মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মুসলিমাবাদ গ্রামের বিল্লাল বেপারীর মেয়ে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
নিহতের চাচা পরিচয়দানকারী কোহিনূর ইসলাম জানান, তার ভাতিজী সালমার সঙ্গে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মিজানুরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ১০ বছর আগে মিজানুর সাথে ডিভোর্স হয় সালমার।এরপর মিজানুর আবারও বিয়ে করেন। তবে মিজানুর তাদের তিন মেয়ে মিতা, মনিকা ও মিসকাতকে তার কাছেই রেখে দেয়। আর সালমা ডিভোর্সের পর থেকে মানিকগঞ্জে সিঙ্গাইরের মুসলিমাবাদ এলাকায় তার বাবার বাসায় থাকতো ও মাঝেমধ্যেই মেয়েদের দেখতে মিজানুরের বাড়িতে যেত।সালমা সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় আমার বাড়িতেও আসতো সালমা।
তিনি আরও বলেন, সালমা তার মেয়েদের দেখতে ইমান্দিপুরে আসলে মিজানুরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও স্বজনরা তাকে মারধর করতো।এঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আগেও সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল।
এঘটনার পর গত ২০-২৫ দিন আগে মিজানুর বিদেশ থেকে সাভারের ইমান্দিপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।এর মধ্যে গত ২০ জুলাই (শনিবার) ভোরে সালমা বাবার বাড়ি থেকে ইমান্দিপুরে মিজানুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়।পরে গতকাল(সোমবার) বিকেলে তার ভাতিজী সালমাকে গণপিটুনী দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন তিনি।
নিহত সালমার চাচা অভিযোগ করে আরও বলেন, এ ঘটনায় স্বামী মিজানুর ও তার স্বজনরা সালমাকে ছেলেধরা অজুহাতে গণপিটুনীর দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তবে সালমা মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্ত ছিল বলেও জানান তিনি।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন জানান, তেঁতুলঝোড়া এলাকায় গণপিটুনীতে নিহত নারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত সালমা নামে ওই নারী মানুষিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। সে ২০ জুলাই দুপুরে তেঁতুলঝোড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিতেই গিয়েছিলেন।তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এমারত আরও বলেন,ঘটনাস্থল থেকে নিহতের স্বামী মিজানুরের বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়।
এর আগে গত ২০ জুলাই শনিবার ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পর এসআই এমারত জানিয়েছিলেন, ‘প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি যে, ঐ মহিলা বাসা খুঁজতেই তেঁতুলঝোড়া এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে প্রথমে ফারুক নামের একজনের বাসায় যান। পরে ঐ এলাকার সাবেক মেম্বার সোলায়মান নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ভাড়া বাসায় যান তিনি। সেখান থেকে লোকজন তাকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে।পরে একই মালিকানাধীন বাড়ির সামনের দোকানে উৎসুক জনতা ঐ নারীকে গণপিটুনী দেয়। খবর পেয়ে আমি তেঁতুলঝোড়া কলেজের পাশ থেকে গুরুতর অবস্থায় ঐ নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি। তবে পরবর্তীতে সোলায়মান মেম্বার ও ফারুকের বাসায় গিয়ে এব্যাপারে জানতে চাইলে তাদের পাওয়া যায়নি।এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও কথা বলতে রাজি হয়নি।’
এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফএম সায়েদ।
প্রসঙ্গত,এ ঘটনায় ২১ জুলাই রাতে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ৫ শতাধিক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
কেআই/