মাসুদপুর বিট-খাটালে আসছে ভারতীয় গরু
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৩৫ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার
দেশের পশুবিক্রেতাদের স্বার্থে ঈদুল আজহা পর্যন্ত সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ সব ধরনের গবাদিপশু আমদানি ও অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ১৬ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুর সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একই সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সারাদেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ গবাদিপশুর মজুদের পাশাপাশি কোরবানির হাটবাজারে স্বাস্থ্যসম্মত পশুর সরবরাহ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় ওই সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি নাথুরাম সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
তবে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমন্তপথ দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় গরু। মাসুদপুর বিট-খাটালে গত কয়েক দিনে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি গরু প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। অবৈধভাবে চলমান এ বিট-খাটালটিতে আসা ভারতীয় গরু-মহিষ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে বিট মালিকের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকার অনুমোদিত সবকটি বিট বন্ধ রয়েছে। আর এ সুযোগে মাসুদপুর বিটের মালিক মো. রুবেল আহমেদ তার বিট-খাটাল চালিয়ে গত কয়েকদিনে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চোরাইপথে আসা প্রতিজোড়া গরু-মহিষ থেকে ১৬ হাজার ৬শ টাকা করে আদায় করছেন।
মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলমান বিট-খাটালে চাঁদাবাজি ও ৬০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে ১০ জনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে খাটাল সংশ্লিষ্টরা। পরে বিজিবি সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে শিবগঞ্জ থানায় সোপার্দ করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ১০ জনকে আসামী করে শিবগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন বিট-খাটাল মালিক রুবেল আহমেদ।
মাসুদপুর বিট-খাটালে চাঁদাবাজির ঘটনায় ৫৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের মাসুদপুর বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার শাহাদৎ হোসেন জানিয়েছিলেন, সোমবার রাতে ভারত থেকে মাসুদপুর খাটালে ৯২০টি গরু আসে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেসব গরুর কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা কালেকশন চলছিল। এ সময় অতর্কিতে হামলা চালায় এবং তাদের কয়েকজন কালেকশনের টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। বাকিদের স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আটক করি।
পাশ্ববর্তী বিওপি সংলগ্ন রঘুনাথপুর বিট-খাটালের মালিক মনিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভারত থেকে বৈধভাবে প্যাডের মাধ্যমে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মাসুদপুর সীমান্তপথে রুবেল কিভাবে গরু আনছে সেটা তিনি বোধগাম্য নন।
মাসুদপুর বিট-খাটাল মালিক রুবেল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন নেতা আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার তারা আমাদের খাটালে হঠাৎ করেই হামলা চালায় এবং কালেকশনের ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিভাবে বিটখাটাল চালাচ্ছেন সেটি জানতে একাধিক মাধ্যম যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিবগঞ্জ উপজেলা চোরাচালান নিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি চৌধুরী রওশন ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসন্ন ঈদুল আজহা পর্যন্ত সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ সব ধরনের গবাদিপশু আমদানি নিষিদ্ধ রয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত অমান্য শিবগঞ্জ সীমান্তপথে ভারতীয় গরু আমদানি করার সুযোগ নেই। যদি কেউ এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গরু আমদানি করে তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।