যেভাবে মিন্নি জবানবন্দি পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:০৮ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার
পুলিশের শিখানো কথায় মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এমনটি দাবি করে আসছে তার পরিবার। জবানবন্দি পরিবর্তন করতে চান মিন্নি বলেও জানা গেছে। এ পরিবর্তনের আবেদনে মিন্নিকে পাড়ি দিতে হবে বেশ কয়েকটি ধাপ। একই সঙ্গে নির্যাতনের ফলে তিনি এ জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছেন এমনটি আদালতে প্রমান করতেও হবে তাকে।
বরগুনার চাঞ্চল্যকর শাহ নেওয়াজ শরীফ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যা মামলায় গ্রেফতার তার স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বর্তমানে জেল হাজতে আছেন।
গতকাল বুধবার বরগুনা জেলা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। মিন্নির সাক্ষাতের শেষে ঐ দিন বারী আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেনি। তারা বলেছে, এ ধরনের আবেদনপত্র বাইরে থেকে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এই আবেদন মিন্নিকে নিজ হাতে লিখতে হবে। এ জন্য তাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ ও কলম চাইতে হবে। আমি বলে এসেছি চাইতে। আমি মিন্নিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি কীভাবে আবেদন করতে হবে।’
তবে মিন্নি এখন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ ও কলম চাননি বলে জানিয়েছেন জেল সুপার আনোয়ার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিন্নি চাইলে কাগজ ও কলম সরবরাহ করা হবে। জবানবন্দি প্রত্যাহার ছাড়াও যে কোনও আবেদন আসামি যদি করতে চান, জেল সুপারের মাধ্যমেই করতে হবে। এটাই কারা বিধি। জেল কর্তৃপক্ষ সেটা কোর্টে পাঠাবে। আইনজীবীর কোনও ভূমিকা নেই। আর কোর্টে পাঠানোর আগে আমি চেক করবো আবেদন ঠিক আছে কিনা।’
ঢাকা জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি আসামি কারাগারে থাকেন, সেক্ষেত্রে জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য তাকেই আবেদন করতে হবে। কারাবিধি অনুযায়ী এটাই নিয়ম। যদি আসামি লিখতে সমর্থ না হন, তাহলে আদালতের সম্মতি নিয়ে ও বিচারকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে আবেদন আদালতে গৃহীত হলেও বিচার শুরুর পর সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে প্রথম জবানবন্দি জোর করে নেওয়া হয়েছিল।’
তবে ভিন্ন কথা বলছেন আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি শুক্রবার একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘আইনজীবী আসামীর পক্ষ থেকে আদালতে জাবনবনন্দি পরির্তনের জন্য আবেদন করবেন। এখানে জেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নেই। আসামী কারাগারে থাকলে আইনজীবী ওকালত নামায় স্বাক্ষর নেওয়ার পর আসামীর পক্ষ হয়ে সকল আবেদন করবেন। কারাগার থেকে তার পক্ষ হয়ে আবেদনে স্বাক্ষর আনবেন এবং জেল কর্তৃপক্ষ শুধু মাত্র ঐ স্বাক্ষর যাচাই করে দেখবে।’
গত ১৬ জুলাই রাতে হত্যা মামলায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে এদিকে ১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বক্তব্য রেকর্ড করতে মিন্নিকে বরগুনা পুলিশলাইন্সে নিয়ে পুলিশ। পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে তার কোন আইনজীবী সে দিন আদালতে ছিলেন না। এ দিন পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ডের ২য় দিনে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। মিন্নি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেন, ‘জেল সুপারের সামনে মিন্নি বলেছেন, তার সঙ্গে জোর-জবরদস্তি হয়েছে। তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এরপর ২৭ জুন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সন্দেহভাজন আরও চার পাঁচজন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়।
গত ২ জুলাই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা মিন্নি স্বীকার করেছেন বলে রিমান্ডে নেওয়ার এক দিন পর জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
অন্যদিকে ২২ জুলাই মিন্নির চিকিৎসার আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিচারক তখন উল্লেখ করেন।
এমএস/এসি