ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

রাজশাহীতে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পুকুর ভরাট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

রাজশাহীর পবা উপজেলার বেড়পাড়া এলাকায় এবার পুলিশ পাহারায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। সেই সাথে জোরপূর্বক একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে জোরপূর্বক পুকুর ভরাট করার এ অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের সহযোগি সংগঠনের এক নেতার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার সাকাল থেকে পুলিশ সদস্যদের পাহারায় বসিয়ে ফের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে জোরপুর্বক পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হলেও শুক্রবার বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান বাদল। 

স্থানীয় সূত্র জানা যায়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে মদনপুর, কসবা ও চরহরিপুর মৌজা নিয়ে গঠিত বালু মহাল ইজারা নেন রাজশাহী নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। কিন্তু ইজারা নেওয়া বালুমহালের বাহিরে সোনাইকান্দি এলাকা থেকে এতোদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন তিনি। এতে সোনাইকান্দি এলাকায় পদ্মার তীররক্ষা নতুন বাঁধ ধসে যায়। এরপর জেলা প্রশাসন, পবা উপজেলা প্রশাসন ও রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২০ জুলাই পরিদর্শন করে ঐ এলাকায় সকল ধরণের বালু উত্তোলনের উপর নিষেধজ্ঞা জারি করে । এরপর সোনাইকান্দি এলাকা থেকে বালু উত্তোলন কাজ স্থগিত রাখেন আনোয়ার হোসেন। 

পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান বাদল জানান, গত ২৩ জুলাই সকাল থেকে বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকার বেড়পাড়ায় বালু উত্তোলন শুরু করেন। বালু উত্তোলন করে তিনি একটি পুকুর জোরপুর্বক ভরাট করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবহনের জন্য বালু মজুদ করতে মালিকদের অনুমতি না নিয়ে পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করছেন তিনি। নিষেধাজ্ঞার কারনে কয়েটা দিন বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে দামকুড়া থানা পুলিশের পাহারায় ফের বালু উত্তোলন করে পুকুর ভরাট শুরু করেন আনোয়ার। এতে প্রতিবাদ করতে আসলেও পুলিশের বাধায় সরে যান স্থানীয়রা। ঐ দিনই বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন বব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা যায়, ঐ পুকুরটির রেকর্ডভূক্ত মালিক রাধা গোবিন্দ সাহা। তার মৃত্যুর পর নিয়মানুযায়ী এর মালিক হন তার সাত ছেলে মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে তিন ছেলেও দুই মেয়ে ভারতের স্থানীয় বাসিন্দা এবং এক ছেলে গোদাগাড়ী উপজেলায় কাজ করেন। অন্যজন ধর্মান্তরিত হয়েছেন। 

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পুকুর ভরাটের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে জানান হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল বলেন।

পুলিশ পাহারায় বালু উত্তলনের অভিযোগ অস্বীকার করে দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকায় পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছিল। বালু উত্তোলন বৈধ কি অবৈধ তা পুলিশ নয়, প্রশাসন দেখবে।’

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকায় বালু উত্তোলনের উপর নিষেধজ্ঞা জারি রয়েছে। এছাড়াও ইজারা দেয়া বালু মহালের বাহিরে বালু উত্তোলন সম্পন্ন অবৈধ। পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকায় এবং বালুমহালের বাহিরে বালু উত্তোলন করলে তদন্ত করে ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ জোরপূর্বক পুকুর ভরাটের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি বলে জানান উপজেলার এ প্রধান নির্বাহী।

এমএস/এসি