মিন্নির সঙ্গে দেখা করে ডাক্তার যা বললেন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৪৬ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৫০ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে জোরপূর্বক তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে মিন্নির বাবার দাবির পর মিন্নির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলেছেন, মিন্নি সুস্থ আছেন।
শুক্রবার দুপুরে বরগুনা কারাগারে জেল সুপারকে সঙ্গে নিয়ে মিন্নির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন সিভিল সার্জন অফিসের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেল সুপার আনোয়ার হোসেন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে জেল গেটে সাংবাদিকদের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মিন্নির কোনও অসুখ ধরা পড়েনি। তিনি ভালো আছেন। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো, তাই তিনি মানসিকভাবে একটু চাপে আছেন। ভয়ের কিছু নেই, দুশ্চিন্তারও কিছু নেই। তাকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনও অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি।’
মিন্নিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তেমন কোনো কিছু দেখা যায়নি। তাছাড়া মিন্নিও তেমন কিছু বলেননি। তবে তার একটু ঘুম কম হচ্ছে। সকালে যেহেতু জেলাখানার কিছু নিয়মকানুন আছে, সেহেতু সকালবেলা তিনি ঘুমাতে পারেন না। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি তিনি যতটুকু বিশ্রাম নিতে চান তা যেন নিতে পারেন। জেল কর্তৃপক্ষও সেটা দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’
মিন্নিকে কারাগারের বাইরে এনে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কিছুই হয়নি দাবি করেন এই চিকিৎসক। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘মিন্নি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে ভেতরে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। তাকে কারাগারের বাইরে এনে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
তার মেয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন দাবি করে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘তার সারা শরীরে ব্যথা; রাতে সে ঘুমাতে পারে না। আমার মেয়ের কোনও ক্ষতি হলে তার দায়ভার জেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।’
এদিকে গত বুধবার মিন্নির সঙ্গে কারাগারে দেখা করেন তার আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। মিন্নির অসুস্থতার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিন্নির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসক তেমন কোন শারীরিক সমস্যা পাননি।’
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এরপর ২৭ জুন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সন্দেহভাজন আরও চার পাঁচজন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়।
গত ২ জুলাই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা মিন্নি স্বীকার করেছেন বলে রিমান্ডে নেওয়ার এক দিন পর জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
অন্যদিকে ২২ জুলাই মিন্নির চিকিৎসার আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিচারক তখন উল্লেখ করেন।
এসি