ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১২ ১৪৩১

মিন্নির জামিন নামঞ্জুর নিয়ে যা বললেন আইনজীবীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৫৭ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

রিফাত হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির ফের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দীর্ঘ তিন ঘন্টা শুনানি শেষে বেলা ৩ টা ৫ মিনিটে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ২৩ জুলাই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন, তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম।ওইদিন জামিনের আবেদন গ্রহণ করে ৩০ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। 

আইনজীবীরা জানান,মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জামিনের শুনানি শুরু হয়।অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলামসহ অন্যান্য আইনজীবীরা মিন্নির জামিনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধীতা করে পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে মিন্নির জামিন নামঞ্জুরের অনুরোধ জানান।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে বলেন।হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তথ্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।পরে তথ্য যাচাই ও পুনরায় শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। এদিন মিন্নিকে আদালতে উঠানো হয়নি। 

মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আদালত দীর্ঘক্ষণ উভয়ের বক্তব্য শুনে মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। আমরা মিন্নির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 
তিনি বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় ১৫ জন স্বীকারোক্তি দিলেও মামলার প্রধান সাক্ষী রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তার দাবি, মিন্নিকে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে। 

মিন্নির আরেক আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, আদালত উভয়ের বক্তব্য শুনে মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেছেন। সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা এখন উচ্চ আদালতে মিন্নির জামিনের আবেদন করবো। 

তিনি বলেন, মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, অ্যাডভোকেট নিলা গোস্বামী, লিগ্যাল এইড প্রধান ঢাকা জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মো. ফারুক আহম্মেদ, ব্লাস্টের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহিদা তালুকদার, অ্যাডভোকেট এজেডএম শহীদুজ্জামানসহ প্রায় ৩০ জন আইনজীবী বরগুনায় আসেন।

 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। আমরা মিন্নির যে ভূমিকা তা তুলে ধরেছি।এক পর্যায়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে হত্যাকাণ্ডে মিন্নির জড়িত থাকার বিভিন্ন জব্দকৃত উপাদান, তথা ভিডিও ক্লিপ, কলরেকর্ডসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন। পরে সেগুলো আদালত দীর্ঘ পর্যালোচনা করে মিন্নির জামিন নাকচ করে দেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শুনানিতে তাকে সহযোগীতা করেন অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক কিসলু ও অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ। 
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমরা আশা করেছিলাম তার এভিডিয়েন্স তাতে জামিন হওয়ার কথা কিন্তু হলোনা। আমি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করবো।    

মিন্নির পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলামসহ, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের, ঢাকা থেকে আসা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, অ্যাডভোকেট নীনা গোস্বামী, ব্লাস্টের শাহিদা তালুকদার, এ জেড এম শহিদুজ্জামান খান, রাকিব হাসান, সাগর সরকার, নুসরাত হত্যা মামলার আলোচিত আইনজীবী ফারুক আহম্মেদসহ ৩০ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন।

গত ১৬ জুলাই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে সকাল পৌনে দশটার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। পরের দিন বিকেল সোয়া তিনটার দিকে কারাগার থেকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। 
রিমান্ডে নিয়ে ৪৮ ঘন্টা পরেই ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে মিন্নিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই থেকে মিন্নি বরগুনা কারাগারে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত মিন্নিসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

প্রধান আসামী নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তবে মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনও চার জন গ্রেফতার হয়নি। তারা হচ্ছেন মুসা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান ও রিফাত হাওলাদার। আগামী ৩১ জুলাই গ্রেফতারকৃত আসামীদের বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হবে।

কেআই/