ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে বিএসইসি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৩ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৮:২৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৯ বুধবার

বাংলাদেশ সিকিউরিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনার প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেছেন, তারা দেশে নতুন একটি স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবছেন। 

আজ ৩১ জুলাই, বুধবার অনলাইন পত্রিকা অর্থসূচকের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জে যে ধরণের গুণগত পরিবর্তন আসার কথা ছিল, তা আসেনি। এই এক্সচেঞ্জের দক্ষতা বাড়েনি। স্বচ্ছতা আসেনি। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এই এক্সচেঞ্জ কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতে পারছে না। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এই স্টক এক্সচেঞ্জ আগামী দিনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থায়িত্বশীলতার চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। যদি তারা আদের অবস্থান পরিবর্তনে সক্ষম না হয় তাহলে আমাদেরকে ওই পথেই (নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা) যতে হবে। 

রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব শাকিল রিজভী, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ছায়েদুর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন পাটোয়ারি এফসিএমএ, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থসূচকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুন নাহার শরমিন। অর্থসূচক সম্পাদক জিয়াউর রহমান এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো ২০১৯ পরবর্তী পুনর্মিলনী ও বিশেষ প্রকাশনা সুবর্ণ আগামী’র মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এক্সপোর স্পন্সর ও স্টলে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের সঙ্গে সুবর্ণ আগামীর অন্যতম দুজন লেখক ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) সভাপতি ও ইটিভির প্ল্যানিং এডিটর সাইফ ইসলাম দিলাল এবং দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন মোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর হেলাল উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজার পরিচালনায় স্টক এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্ট চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়, কতিপয় ব্রোকার-ডিলারের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়। কিন্তু সেটিই হচ্ছে। তাই আমাদেরকে বিকল্পের কথা (নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা) ভাবতে হচ্ছে। গত দুই মাস ধরে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে এটি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাজারে যে মন্দা দেখা যাচ্ছে তার জন্য মোটেও বিএসইসি দায়ী নয়। এর পেছনে থাকা অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না, লুটতরাজ চলছে-এর কোনোটির জন্যই বিএসইসি দায়ী নয়। বাজারের সাময়িক মন্দার পেছনে পিপলস লিজিং এর অবসায়নের ঘটনাও অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু এর দায় বিএসইসির নয়। বাজারে বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্বের ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এর দায়ও বিএসইসির নয়।

প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, বিএসইসির কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি বা নীতি-কৌশলের প্রভাবে বাজারে দর পতন হয়নি। তবু একটি মহল বিএসইসিকে দায়ী করছে। কথিত বিনিয়োগকারীরা মিছিল মিটিং করে বিএসইসিকে দোষারোপ করছে। এর পেছনে কারো কারো সংশ্লিষ্টতা ও ইন্ধন আছে। 

তিনি সতর্ক করে বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে যারা পেছন থেকে খেলছেন, তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শত্রু। বিএসইসি এ বিষয়ে সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বাজারের সাম্প্রতিক পতনের বিষয়ে বিএসইসির তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে। চূড়ান্তভাবে দোষ প্রমাণিত হলে বিএসইসি কঠোর ব্যবস্থা নেবে। 

বিএসইসির কমিশনার বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। এমনকি গণমাধ্যমও অনেক ভুল করে বসছে। অনেক শিক্ষিত মানুষের ধারণাও পর্যাপ্ত নয়। সম্প্রতি দর পতনের কারণে বাজার মূলধন ২৭ হাজার কোট টাকা কমেছে। অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে বাজারের সব কোম্পানির বাজারমূলধন বা মূল্য ২৭ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এর অর্থ এই নয় যে টাকাগুলো বাজার থেকে বের হয়ে গেছে, পাচার হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার থেকে মুদ্রা পাচারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি বিও একাউন্টের সঙ্গে ব্যাংক একাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র যুক্ত। 

আরকে